চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি যে বিপর্যস্ত সেটা এখন সকলেই জেনে গিয়েছেন। উনিশের লোকসভা ভোটে পাওয়া ১৮টি আসন কমে এবার ১২তে ঠেকেছে। পাশাপাশি অধিকাংশ তারকা প্রার্থীর হেরে যাওয়া নিয়ে এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। পাশাপাশি বিতর্কও কম হচ্ছে না। তৃণমূলের মতো নব্য এবং পুরাতন দ্বন্দ্ব এখন বঙ্গ বিজেপিতেও সংক্রমিত। অর্থাৎ, যারা প্রথম থেকেই বিজেপিতে ছিলেন, যারা বিজেপিকে বাংলায় শূন্য থেকে উঠিয়ে একটা সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে এসেছেন, তাঁরাই এখন কোনঠাসা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের কাছে। স্পষ্ট কথায় বলতে গেলে শুভেন্দু অধিকারীদের কথাই উঠে আসছে আলোচনায়। ২০২৪-এর লোকসভায় যেমন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপরেই ভরসা করেছিল। প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রচার, ভোট করানো সবই ঠিক করেছেন শুভেন্দু এবং সুকান্ত মজুমদার। এমনকি বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ছাপিয়েও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে। সেখানে কার্যত ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন দিলীপ ঘোষের মতো প্রাক্তন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।
এবারে বিজেপি এক ধাক্কায় ৬টি লোকসভা আসন হারিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মেদিনীপুর। এই মেদিনীপুরের সাংসদ ছিলেন দিলীপ ঘোষ। গত লোকসভায় তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৯০ হাজার ভোটের। কিন্তু প্রথম দিকের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতে দেখা গেল দিলীপ ঘোষের নাম নেই। যা নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়। পরে অবশ্য দিলীপকে প্রার্থী করা হয়, তবে মেদিনীপুরে নয়, তাঁকে পাঠানো হয় বর্ধমান-দূর্গাপুর আসনে। তাও একেবারে শেষ মুহুর্তে। ফলে ৯০ হাজার লিড থাকা দিলীপ ঘোষের সামনে এখন মাত্র ৪ হাজার ভোটের লিড থাকা বর্ধমান-দূর্গাপুর আসন। এ কথা সর্বজনবিদিত যে দিলীপকে জেতা আসন মেদিনীপুর থেকে সরানোর পিছনে রয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু বিজেপির অন্দরের খবর, এর পিছনে আসল কলকাঠি ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। কারণ, রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু অনুগামী হিসেবে পরিচিত আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা। অগ্নিমিত্রা দীর্ঘদিন ধরেই আসানসোল অঞ্চলে বিজেপির সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে একবার উপনির্বাচনে হারলেও তিনি এবার লড়াই দিতেন আসানসোলে। এমনকি বহিরাগত তত্ত্বে তিনি পাল্টা প্রচারও করতে পারতেন। কিন্তু সেটা হল না, অগ্নিমিত্রাকে মেদিনীপুরে পাঠানোয়। অপরদিকে, দিলীপ ঘোষ শেষ মুহূর্তে বর্ধমান-দূর্গাপুরে এসে যতটা সম্ভব মরিয়া চেষ্টা করেছেন। প্রচারেও জানপ্রাণ লড়িয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু আনকোরা এই লোকসভায় তিনি সংগঠন গুছিয়ে নিতে পারেননি। গত লোকসভায় বর্ধমান-দূর্গাপুর আসনে জিতেছিলেন বিজেপির এসএস আলুওয়ালিয়া। এবার তাঁকে আসানসোলে পাঠিয়ে বর্ধমান-দূর্গাপুরে পাঠানো হয় দিলীপ ঘোষকে। ফলে এই জেতা আসনও হাতছাড়া হয় বিজেপির। দিলীপ হারলেন ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ভোটে। হারের পরই দিলীপ ঘোষ তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় সামনে আনেন চক্রান্ত তত্ত্ব। সেই সঙ্গে উস্কে দিয়েছেন আদি ও নব্য প্রসঙ্গ। আর কেন এবার বিজেপির ফল খারাপ হল, সে প্রসঙ্গে দিলীপের সাফ কথা, এত দিন তো সব দোষ তো দিলীপ ঘোষ হত। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন দায় তাঁদের নিতে হবে। জিতলে মালা পরব আর হারলে দায় নেব না, এটা তো হয় না। এই বক্তব্যেই পরিস্কার, এবারের লোকসভায় খারাপ ফলের জন্য দিলীপ বিঁধলেন সুকান্ত-শুভেন্দুকে।
Discussion about this post