দেবের আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে চাকরি বিক্রির অভিযোগ। তারকা প্রার্থীর দাবি তিনি জানেন না কিছুই। অভিযোগ সত্যি হোক বা মিথ্যে বার বার এমন দাবি ওঠায় দেবের ক্লিন ইমেজ বিপদের মুখে।
আসন্ন ঘাটাল নির্বাচনে ফের প্রার্থী হয়েছেন দীপক অধিকারী ওরফে দেব। জোড়াফুলের প্রতীকে বিজেপি প্রার্থী হিরণের বিপরীতে লড়বেন তিনি। ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই বছরই দেবকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেন মমতা। রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা দেবের সেইসময় তারকা ইমেজ ছাড়া আর কিছু ছিল না। কেশপুরে জন্ম হলেও মুম্বইতে বেড়ে ওঠা দেবের। বাংলা কথায় হিন্দীর টান ছিল স্পষ্ট।
সংশ্লিষ্ট বছরে ৩ বারের রাজ্যসভার সাংসদ ও ২ বারের লোকসভার সাংসদ সিপিআইএমের গুরুদাস দাশগুপ্তকে হারিয়ে রাজনীতিতে পথচলা শুরু হয় দেবের। তারকা ইমেজ, নম্র ব্যবহার, ভালো জন সংযোগ দেবের রাজনৈতিক টিআরপিকে উর্ধ্বমুখী করে। ২০১৯ সালেও দল আস্থা রাখে দেবের উপর। সেবার ভারতী ঘোষকে হারিয়ে জয়ী হলেন, দলের মান রাখলেন দেব। আবার আরও ৫ টা বছর পার। সামনে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। অতীতের লোকসভা নির্বাচনের বছরগুলির তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। দেবের ইমেজে লেগেছে দাগ। তবে সরাসরি দেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলেও তার আপ্ত সহায়ক রামপদ মান্নার বিরুদ্ধে উঠেছে চাকরি বিক্রির অভিযোগ। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি কল রেকর্ডে দেখা গিয়েছে এক মহিলাকে দেবের সঙ্গে কথা বলতে। যিনি দেবকে সরাসরি জানাচ্ছেন সাংসদের আপ্ত সহায়ক চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু মহিলা না পেয়েছেন চাকরি না পেয়েছেন টাকা ফেরৎ। ফোনের ওপার থেকে যাকে দেব বলে দাবি করা হচ্ছে তাঁর কথোপকথনে স্পষ্ট তিনি পুরো বিষয়টাই জানেন। ফোনের রেকর্ডটি সম্প্রতি পোস্ট করেন দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী হিরণ
এই প্রথম নয়। দেবের আপ্ত সহায়ক রামপদ মান্নার বিরুদ্ধে ই-মেইল করে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে ছিলেন ক্ষীরপাই পুরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা গঙ্গেশ সাঁতরা। গঙ্গেশের অভিযোগ ছিল তাঁর মেয়েকে আশাকর্মীর চাকরি দেওয়ার নামে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন রামপদ। ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা তিনি দিয়েও ফেলে ছিলেন। তবে মেয়ে চাকরি পায়নি। খবর সম্প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে শোরগোল পড়ে যায়। শোরগোলের মধ্যে অভিযোগকারী দাবি করেন চাকরির জন্য দেওয়া পুরো টাকাটাই তিনি ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। যার মাধ্যমে রামপদর হাতে টাকা পৌঁছে ছিল তিনি নিজে এসে ফেরৎ দিয়ে গেছেন। যদিও দেবের আপ্ত সহায়ক বিষয়টি কোনভাবেই স্বীকার করেননি। তিনি দাবি করেন তাঁর নাম ভাঙিয়ে এমন কাজ করা হচ্ছে।
এর আগে দেবের নাম জড়ায় গরুপাচার মামলায়। বাংলার সুপার স্টারকে তলবও করা হয়। এরপরই ভোটের মুখে দেব জানান তিনি রাজনীতিতে আর থাকতে চাইছেন না। যদিও সে সব এখন অতীত। অনেকেই মনে করেছিলেন দেবের নাম দলের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। এবার ভোটের মুখে চাকরি বিক্রির অভিযোগ উঠে এসেছে তার আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে। রামপদ মান্নার সামনে থাকলেও আদতে টার্গেট যে সুপার স্টারই তা বুঝতে কারোর বাকি নেই। এখন প্রশ্ন চাকরি বিক্রির অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে দেব জানেন না এমনটা কী করে সম্ভব। প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। অর্থাৎ বিগত দুই লোকসভা নির্বাচনে দেবের যে ক্লিন ইমেজে ছিল তার অনেকটাই কালিমালিপ্ত হয়েছে। তারকা দেব যুক্তিহীন, হাস্যকর বলে বিষয়গুলি এড়িয়ে যেতে চাইলেও আদতে কী এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ঘাটালের মানুষ কী ব্যালট বক্সে এর উত্তর চাইবেন? না কি ভোটের পর জোড়া ফুল থেকে ঝড়ে পড়বে এই তারকা ফুল।
Discussion about this post