২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে লড়ছে ‘ইন্ডিয়া জোট’। এই জোটে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থাকলেও এই বাংলায় জোটসঙ্গীদের একটিও আসন ছাড়েননি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমোর থেকে মাত্র একটি আসন চেয়েছিলেন নিয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের ভাদোহী লোকসভা কেন্দ্রটি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে উত্তরপ্রদেশে ওই একটিমাত্র আসনে লড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ললিতেশপতি ত্রিপাঠি। তাঁর পরিচয় কি, তিনি কী পারবেন উত্তরপ্রদেশে ঘাসফুল ফোটাতে? এই প্রশ্নগুলিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে।
নরেন্দ্র মোদির বারানসী লোকসভা কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই ভাদোহী কেন্দ্রটি। অর্থাৎ এটি বারানসীর লাগোয়াই বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেখানে বারানসীকে মনের মতো করে সাজিয়েছেন, সেখানে ভাদোহী অনেকটাই যেন দুয়োরানীর মতো আগোছালো। এখনও দেশের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম এই ভাদোহী জেলা। সেখান থেকেই লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ললিতেশপতি ত্রিপাঠি। তিনি বছর তিনেক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। এই ললিতেশপতির পরিবারের বিগত তিন প্রজন্ম ধরে কংগ্রেসী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে ভাদোহী এলাকায় তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। একসময় কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন কমলাপতি ত্রিপাঠি, ললিতেশপতি তাঁরই উত্তরসূরি। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ললিতেশপতির একটি রাজনৈতিক ভিত্তি রয়েছে ভাদোহী এলাকায়। ফলে তিনি জানপ্রাণ দিয়ে প্রচার করছেন। এমনকি ধীরে ধীরে নিজের সংগঠনও তৈরি করেছেন।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসম ও ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি উত্তরপ্রদেশের একমাত্র আসনে তাঁর দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যাননি। তা বলে ভাদোহীতে ললিতেশপতি যে একাই প্রচার করছেন তা নয়। একমাত্র তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে জোরদার প্রচার করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। তিনি ললিতেশপতি ত্রিপাঠির সমর্থনে রোড শো এবং জনসভা করেছেন। জোটের প্রার্থী হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন। এমনকি তাঁর নির্দেশে ভাদোহীর সমাজবাদী পার্টির কর্মী-সমর্থক এবং স্থানীয় নেতারা পূর্ণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি কংগ্রেসের তরফে উত্তরপ্রদেশের সভাপতি অজয় রাইও ভাদোহীতে গিয়ে প্রচার করেছেন তৃণমূলপ্রার্থী ললিতেশপতি ত্রিপাঠির সমর্থনে।
প্রসঙ্গত, ভাদোহী খুব ছোট লোকসভা আসন। এখানে বিধানসভা মাত্র পাঁচটি। এখানে জাতপাতের রাজনীতি সবচেয়ে গুরুত্ব পায়। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে ললিতেশপতির পক্ষেই জাতপাতের সমীকরণ সবচেয়ে বেশি কাজ করছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ভাদোহী লোকসভা কেন্দ্রে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। আর ব্রাক্ষ্ণণ ভোটার প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার। ললিতেশপতি নিজে ব্রাক্ষ্ণণ হওয়ায় সুবিধা পাবেন তিনি। আবার স্থানীয় মাল্লা সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে প্রায় তিন লক্ষ। এই সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা পাশের কেন্দ্র মির্জাপুরের সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী রমেশ চাঁদ মাল্লা ভাদোহীতে এসে বেশ কয়েকটি সভা করেছেন তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে। সবমিলিয়ে বলা যায়, ললিতেশপতি তৃণমূলের টিকিটে লড়লেও তাঁর হয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস। যদিও ললিকেশপতি বলছেন, আমি মনে করি মমতা দিদি সপা নেতা মুলায়ম সিং যাদবের বোনের মতো। দিদি আমাকে প্রেরণা দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, এবার ভাদোহীতে তৃণমূলের একাকি সৈনিকের বিরুদ্ধে ময়দানে রয়েছেন, বিজেপির বিনোদ কুমার বিন্দ এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির হরকিষণ সিং চৌহান।
Discussion about this post