বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলাকা দখলের লড়াইয়ে দেখা গিয়েছে শাসক দলের তৃণমূল স্থরের কর্মীদের। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক, পুরসভা থেকে কর্পোরেশেনের জনপ্রতিনিধির মধ্যে দ্বন্দ্ব। সে তো গেল দলের নীচু তলার দ্বন্দ্ব। কিন্তু এবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বদের মধ্যে সরাসরি দ্বন্দ্ব সামনে এল। যদিও এই ঘটনা বাংলার মানুষের কাছে নতুন কোনও ব্যাপার নয়। এর আগেও সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছিল কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র বনাম বর্ষিয়ান নেতা সৌগত রায়ের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। এমনকি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে দল ছেড়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান বিজেপি নেতা তাপস রায়। এমনিতেও তৃণমূলের অন্তরে ববি-অভিষেক সম্পর্ক নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মতবিরোধ দেখা গেছে।এবং এ রকম উদাহরণ আরও আছে।
কিন্তু এবার ব্যাপারটা আলাদা। এবার দলেরই শীর্ষ নেতা তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সহকারি তথা ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি সেক্সপিয়র থানায় অভিযোগ দায়ের করে বসল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অফিস।
কি এমন হল, যে সরাসরি থানায় অভিযোগ?
সুত্রের খবর কলকাতা পুরনিগমের মেয়রের “অফিসার অফ স্পেশাল ডিউটি” কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে অভিষেক ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে টাকা তোলাবাজি করেছেন। সেই কথা কানে যেতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এর ২৫ নম্বর ক্যামাক স্ট্রীট অফিসের কর্মী অয়ন ঘোষ দস্তিদার লিখিতভাবে শেক্সপিয়র সরণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কলকাতা পুরনিগম এখন তৃণমূল কংগ্রেসই চালনা করছে। যার দায়িত্বে খোদ রাজ্যের প্রথমসারির মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম। তাঁরই ওএসডি-র বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস থেকে। ফলে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। এই ঘটনা যেন তৃণমূলের হেভিওয়েট গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে সরাসরি প্রকাশ্যে এনে ফেলেছে।
আর খবর শুনেই মন ভেঙেছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ববি নামেই পরিচিত। তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন, অভিষেক আমায় বলতে পারতো। একজন মানুষের নামে এমন কোনও অভিযোগ যদি আসে, যে অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। তাকে কি করে সরিয়ে দেবো আমি? প্রশ্ন কলকাতার মেয়রের
।আর তারপরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি ববির। সূত্রের খবর মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। এবং অভিযোগের ভিত্তিতে যেকোনো সাহায্যে তিনি সহযোগিতা করবেন এমনটাই জানিয়েছেন। অন্যদিকে এই ঘটনা সত্যি বসিরহাট লোকসভা প্রার্থী রহস্য নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফিরহাদ ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন কাজী নুরুল ইসলাম এর স্থানে অন্দরমহলের নাম শোনা যাচ্ছিল প্রিয়দর্শিনী হাকিমের। আর এই সিদ্ধান্ত যাতে মুখ্যমন্ত্রী নামের তার জন্যই এই ষড়যন্ত্র এমনটাই মনে পড়ছে ফিরহাদ ঘনিষ্ঠ মহল।
তৃণমূলের তরফ থেকে এই বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেনি। এতদিন এরকম উঁচুদরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটাই দূরে ছিল কালীঘাট থেকে। তবে এই ঘটনা যেন ইঙ্গিত দিচ্ছে তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন কালীঘাটের অন্দরে গিয়ে সেধিঁয়েছে। এখন দেখার, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যাম রাখেন না কূল রাখেন।
Discussion about this post