দশমী শেষে পুজো কার্নিভালের পালাও শেষ। এবার মা লক্ষ্ণীর আরাধনায় মেতেছে বঙ্গবাসী। তিথি অনুযায়ী বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিনেই লক্ষ্ণীপুজো করা যাবে এ বছর। মা লক্ষ্ণী হলেন ধনসম্পদের দেবী। তিনি শান্ত কোমল রূপে পদ্মের ওপর অধিষ্ঠিতা। গৃহস্থ বাঙালিরা সাধারণত দ্বিভূজা মূর্তির পুজো করেন। তবে পূরাণমতে লক্ষ্ণী চতুর্ভূজা। দুই হস্তে কমল বা পদ্মফুল, এক হাতে মঙ্গলকলস এবং এক হাতে বরাভয় মুদ্রা। কিন্তু কখনও অষ্টাদশভূজা লক্ষ্ণীর কথা শুনেছেন? রণংদেহী সেই মূর্তির প্রতিটি হাতেই রয়েছে অস্ত্র! আমাদের এই বাংলাতেই প্রতি বছর মহালক্ষ্ণীর এই রূপের পুজোই হয়ে আসছে জানেন?
দশভূজা দুর্গা কৈলাশে ফিরে গিয়েছেন। এবার মা লক্ষ্ণীর পালা। মা দূর্গার দশ হাতে যেমন অস্ত্রশস্ত্র থাকে। তেমনই দ্বিভূজা মা লক্ষ্ণী এক হাতে ধানপূর্ণ ঝাঁপি এবং অন্য হাতে পদ্মফুল নিয়ে বাংলার প্রতিটি ঘরেই পুজো পান। কিন্তু মালদা জেলার বামনগোলায় প্রতি বছর রণংদেহী অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্ণীর পুজো হয়। বিগত ২৫ বছর ধরে মালদার বামনগোলা ব্লকের গাঙ্গুরিয়া সারদা তীর্থ আশ্রমে পুজিতা হচ্ছেন ১৮ হাত বিশিষ্ট মা লক্ষ্ণী। বলা ভালো কোজাগরী লক্ষ্ণীপুজোর রাতে পুজো পাবেন অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্ণী।
বিভিন্ন হিন্দু পুরাণে মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী দেবীর সমন্বয়ে দেবী চণ্ডীকে সর্বোচ্চ সত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দেবী পার্বতীর উগ্র অবতার বিশেষ। দেবীমাহাত্ম্য গ্রন্থের অন্তঃভাগে মূর্তিরহস্য অংশে তাকে অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মী নামে অভিহিত করা হয়েছে। এখানে দেবীর প্রতিটি হাতেই থাকে অস্ত্রশস্ত্র। যেমন ত্রিশূল, চক্র, গদা, তীর-ধনুক, বজ্র্য, কুঠার, পদ্ম, শঙ্খ-সহ অন্যান্য অস্ত্র। অর্থাৎ অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্ণী দেবী চণ্ডীর এক রূপ। আর এই রূপের পুজোই করেন গাঙ্গুরিয়া সারদা তীর্থ আশ্রমের সন্নাসীরা। ফলত এই পুজোর ভিন্নতা আছে। কোজাগরী পূর্ণিমার দিনে ষোড়শপচারে মহালক্ষ্ণীর পুজো এবং সন্ধ্যেবেলায় পঞ্চমকারে মা লক্ষ্ণীর পুজো।
সেই ১৯৯৮ সালে মালদার বামনগোলা ব্লকের গাঙ্গুরিয়া সারদা তীর্থ আশ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তারপর থেকে অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল থেকে ১৮ হাত বিশিষ্ট মহালক্ষ্মী পুজোর সূচনা করেন। তবে দেবী এখানে, সকালে এক রূপে, ও রাতে একরূপে পুজিত হয়ে আসছে সেই থেকেই। জগতের কল্যাণের জন্যই এই আশ্রমে মহালক্ষ্ণীর পুজো করা হয়।অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্ণীর পুজো উপলক্ষ্যে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তদের ঢল নামে বামনগোলার গাঙ্গুরিয়া সারদা তীর্থ আশ্রমে। এখানে সকালে মায়ের এক রূপের পুজো এবং হোমষজ্ঞ হয় এবং রাতে মায়ের আরেক রূপের পুজো হয়। পুজোর পর সকল ভক্তদের জন্য প্রসাদ বিতরণ করেন আশ্রমের আবাসিকরা।
Discussion about this post