–শেথ হাসিনার আমলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার। এই জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রহমানিকেও জেল থেকে ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। তাঁকে গাজীপুরের হাই সিকিয়োরিটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। তাঁকে ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই জঙ্গি নেতা জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ভারতকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিল। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার।অপরদিকে সময় যত এগিয়েছে, ততই বাংলাদেশি জঙ্গি নেতা এবং মৌলবাদী কট্টরপন্থীরা নিজেদের মুখোশ খুলতে শুরু করে। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানের কট্টরপন্থী জঙ্গি নেতারাও। তাঁরা প্রকাশ্যেই বাংলাদেশিদের পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা দেওয়ার ঘোষণা করছে। এমনই এক বক্তব্য সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
সেই সময় থেকেই প্রমাদ গুণেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় হাই এলার্ট জারি করেছিল ভারত সরকার। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া প্রতিটি রাজ্যকেই বাড়তি নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ছিল, ভারতে নাশকতার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলি। অবশেষে ভারতের আশঙ্কাই সত্যি বলে প্রমানিত হল। অসম পুলিশের জালে ধরা পড়ল আনসারুল্লা বাংলা টিমের ৮ জঙ্গি। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার ভারত উপমহাদেশীয় শাখা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যে ভারতজুড়ে নাশকতার ছক কষছে, তার প্রমানও পাওয়া গেল ধৃতদের কাছ থেকে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও কেরলে অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লা বাংলা টিমের ৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের ২ জন ব্যাক্তি। ধৃতদের গুয়াহাটি আদালতে তোলার পর ৮ জনকেই পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
তাঁদের জেরা করতে ইতিমধ্যেই গুয়াহাটি পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ-র আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুজন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছিল। এছাড়া তাঁদের মোবাইলে পাওয়া গিয়েছে বিশেষ অ্যাপ, যার সাহায্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ১৫ জন হ্যান্ডলারের সঙ্গে এরা যোগাযোগ রাখত। অসম পুলিশ সূত্রে খবর, গত নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে আসে রাজশাহির বাসিন্দা মহম্মদ সাদ রাডি নামে এক ব্যাক্তি। তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে গিয়ে সে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লা বাংলার স্লিপার সেলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেলের টার্গেট ছিল শিলিগুড়ির ‘চিকেনস নেক’। গোয়েন্দারা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন, ভারতে থাকা আল কায়দা ও আনসারুল্লা বাংলা টিমের স্লিপার সেলের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এবার তার হাতেনাতে প্রমান এল। কারণ ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জেহাদি বই, উস্কানিমূলক নখিপত্র-সহ বিভিন্ন জঙ্গি নেতার বক্তৃতা সম্বলিত পেন ড্রাইভ। অসম পুলিশের স্পেশাল ডিজি হরমিত সিংহ যাকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছেন।
জানা যাচ্ছে, অসম পুলিশের এসটিএফ বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পশ্চিমবঙ্গের এসটিএফ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে। এরপর তাঁরা তিনটি রাজ্যে একযোগে মোট ১৪টি স্থানে হানা দেয়। টানা ৪৮ ঘণ্টার অপারেশনেই এই ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম মহম্মদ শাদ রদি। যার বাড়ি বাংলাদেশের রাজশাহি এলাকায়। অপরদিকে, ধৃত মোহাম্মদ আব্বাসের বাড়ি মুর্শিদাবাদের নিশ্চিন্তপুরে। আর মিনারুল শেখ থাকত হরিহরপাড়ায়। অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁরা ধরা পড়ে। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বসে আনসারুল্লা বাংলা টিমের ‘প্রধান’ জসিমউদ্দিন রহমানির সহযোগী মহম্মদ ফারহান ইশরাক পুরো পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড। তাঁর অধীনে থাকা মহম্মদ শাদ রদি ভারতে স্লিপার সেলের দায়িত্বে ছিল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দিনে দিনে জঙ্গি, জেহাদিদের কারখানায় পরিনত হচ্ছে বাংলাদেশ। আর তাতে শিক্ষকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।
Discussion about this post