বুধবার রাত ১টা ৫০ মিনিট নাগাদ ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে যায়। জানা গিয়েছে, ঢাকার সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়-সহ আরও কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। অর্থাৎ, দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলামদের অফিস এই ভবনেই। এই আগুনে গুরুত্বপূর্ণ সব নথি সহ অনেক কিছুই পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ আসছে, শেখ হাসিনা ও তাঁর পূত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বহু নথি ছিল এই ভবনেই। যা কার্যত পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আর এখানেই উঠছে গুরুতর প্রশ্ন। প্রথমে নাশকতার অভিযোগ এলেও এখন অনেকেই আন্তর্ঘাতের তত্ত্ব সামনে আনছেন।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ও তাঁর পূত্রের বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং তাঁর কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকিও, যিনি আবার বর্তমানে ব্রিটেনের সাংসদ ও মন্ত্রী। এদের বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির তদন্ত করছে বাংলাদেশের নবগঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদুক। সম্প্রতি এই কমিশন বেশ তয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। বিশেষ করে লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটেনের সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিকিকেও কমিশনে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এই দুর্নীতির তদন্তের জন্য শেখ হাসিনা এবং তাঁর পুত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু অভিযোগ, সেই নথিপত্র কমিশনের হাতে দেওয়ার আগেই সেগুলি পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আর এই বিষয়টি সামনে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিস্ফোরক দাবি করেন। তিনি বলেন, “চারদিকের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা ভয়ার্ত। ব্যক্তিগতভাবে নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভয়ার্ত। হাসিনা ও তার দোসরদের নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগা ও অনেক নথি পুড়ে যাওয়া দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে”।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও সচিবালয়ের আগুন নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘সচিবালয়ে যেভাবে আগুন লেগেছে এবং এর ধরন, অবস্থান যেমন-এটা কখনোই সাধারণভাবে বা ন্যাচারালি বা কোনো দুর্ঘটনাবশত আগুন হতে পারে না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, ষড়যন্ত্র করে, প্ল্যান করে এ আগুনটি লাগানো হয়েছে’। সারজিস আলম আরও দাবি করেন, ‘ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে যারা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করছে, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ; তাদের অফিসগুলো জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেছে। সেখানে খুনি শেখ হাসিনার দালালদের বিভিন্ন সময়ের অন্যায়, অপকর্ম, দুর্নীতির ফাইলগুলো ছিল।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, যে সচিবালয়ে বাংলাদেশের উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়গুলি রয়েছে, সেখানে বসেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা-সহ একাধিক উপদেষ্টারা। সেখানকার নিরাপত্তা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, সেখানে কিভাবে এমন আগুন লাগলো। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, যে ভাবনে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিল বেছে বেছে সেই মন্ত্রণালয়গুলিই কেন পুড়ে ছাই হয়ে গেল? ষড়যন্ত্র যে কেউ করতে পারে, কিন্তু কঠওর নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কিভাবে ঢুকে এভাবে অন্তর্ঘাত চালানো সম্ভব হল? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও এই প্রশ্ন তুলছেন। তাহলে কি বাংলাদেশ সেনা, পুলিশ ও প্রশাসনের ভিতর এখনও কি হাসিনার সমর্থকরা সক্রিয় হয়ে রয়েছে? বিশেষজ্ঞ মহলের আশঙ্কা, এবার ভারত সরকার যদি হাসিনার প্রত্যর্পণ মামলায় যদি প্রামান্য নথি চায়, তাহলে কি করবে বাংলাদেশের তদারকি সরকার? এ কথা অনস্বীকার্য সচিবালয়ের এই আগুনে সবচেয়ে লাভবান হলেন শেথ হাসিনা। আর আরও গাড্ডায় পড়লেন মুহাম্মদ ইউনূস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যতই মুখে হম্বিতম্বি করুক, আদতে দুই নবীন ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়েই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হল। ফলে তাঁদের গিকেও এবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করল।
Discussion about this post