সাম্প্রতিককালে বাংলার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-বিধায়ক জেলবন্দি। এছাড়া অনুব্রত মণ্ডলের মতো একদা দাপুটে নেতাও তিহার জেলে বন্দি। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, তাঁরা কী ভোট দিতে পারলেন? ভোট দিতে পারলেও সেই ভোট কিভাবে নেওয়া হয়? আবার অনেকের প্রশ্ন থাকে, জেলবন্দিরা কি চাইলে ভোটে দাঁড়াতে পারেন? সাধারণ মানুষের এই সমস্ত কৌতুহল থাকতেই পারে, তবে জানিয়ে রাখি ভারতে এই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট আইন আছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টও বিভিন্ন সময় এই বিষয়ে মূল্যবান রায় দিয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গ্রেফতার হয়েছেন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে এখন মুক্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এছাড়া প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। তাঁরা কী ভোট দিতে পারবেন এবার?
এই চাঁদিফাটা গরমে চলছে লোকসভার ভোটগ্রহন। সাত দফার ভোটে ইতিমধ্যেই পাঁচ দফার ভোট সম্পন্ন। বাকি আর দুই দফার ভোট। রাজনৈতিক নেতারা ব্যস্ত ভোটের প্রচারে। কিন্তু জেলবন্দি নেতারা এর থেকে শতহস্ত দূরে একাকি অন্ধকার কুঠুরিতে কালযাপণ করছেন। তাঁদের কোনও তাপ উত্তাপ নেই, কারণ আইন অনুযায়ী কোনও জেলবন্দিই ভোট দিতে পারেন না। শুধু সাজাপ্রাপ্ত আসামীরাই নয়, অভিযোগ প্রমানিত হয়নি, কিন্তু তদন্তের স্বার্থে জেলে আছেন এমন বিচারাধীন বন্দিরাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। এই বিষয়টি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে একাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টও কয়েদিদের ভোটাধিকার নিয়ে কোনও রায় দেয়নি। ফলে আজও ভোটপর্বে তাঁদের ভূমিকা নেই।
অনেক মানবাধিকার সংস্থা এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। মৌলিক অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে দেশের সকল নাগরিকদের ভোটদানের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দাবি করা হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। তাই দেশের সমস্ত নাগরিকই ভোটদানের অধিকার আছে। কিন্তু বিভিন্ন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দেশের সমস্ত নাগরিকের ভোটদানের অধিকার থাকলেও তা কখনই মৌলিক অধিকার নয়। বরং ভোটদানকে বিধিবদ্ধ অধিকার বলেই চিহ্নিত করেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে বিচারাধীন বন্দিদের ভোটদানের অধিকার নিয়ে দাবি খারিজ হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, জেলবন্দি কয়েদিদের ভোটদানের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যায়বহুল। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, একজন জেলে থাকা ব্যক্তি কখনই সাধারণ মানুষের মতো স্বাধিনতা ভোগ করতে পারেন না। ফলে ভোটদানের অধিকার তাঁদের নেই। তবে একজন বিচারাধীন ব্যক্তি কী চাইলে ভোটে লড়তে পারেন? এক্ষেত্রে আইন বলছে অবশ্যই পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে সব মামালার বিচার একসঙ্গে নাও হতে পারে। তাই বিচারাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তি ভোটে লড়তেই পারেন। তবে যদি তিনি কোনও মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ভোগ করেন, তবে তিনি ভোটে লড়তে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আমরা মদন মিত্রের কথা বলতে পারি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মদন মিত্র জেলে থাকাকালীন তৃণমূলের টিকিটে কামারহাটি থেকে ভোটে লড়েন। আবার এই মুহূর্তে জেলে বন্দি খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা অমৃতপাল সিং ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের এক আসনে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তবে তিনি ভোটে লড়লেও ভোট দিতে পারবেন না।
Discussion about this post