ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। সেখান থেকে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠা। পরে ওই ব্যাঙ্ককে সাথে নিয়ে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন। এবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব। অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনে যেন সাফল্যই সাফল্য। তাবলে তাঁর জীবনে বিতর্ক একবারও আসেনি, সেটা কিন্তু নয়। তাঁর বিরুদ্ধেও উঠেছিল একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ। যার জেরে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয় এককালে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরই বাড়তি সুবিধা আদায় করেছেন বলেই মনে করেন একাংশ। কিন্তু তাঁকে আচমকা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে হবে, সেটা অনেকেই বুঝতে পারেননি। ফলে অনেকেই অবাক হয়ে যান অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায়।
একসময় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। কিন্তু নিজ দেশেই গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ছিলেন চূড়ান্ত কোণঠাসা। এমনকি কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত সেই গ্রামীণ ব্যাঙ্কেই। মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ কর ফাঁকির। তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বারবার কর ফাঁকির অভিযোগ এসেছে। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এই কর ফাঁকির বেশিরভাগ সময়েই বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, বলা ভালো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। অথচ, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে “মাইনাস টু ফর্মুলা” প্রচলন করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে। নোবেল জয়ের পাঁচ মাসের মাথায় তিনি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে এই কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। ফলে ২০০৯ সালের শুরু থেকেই গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও গ্রামীণ টেলিকমের বিভিন্ন মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত হতে হয় এবং বারবার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছিল মুহাম্মদ ইউনূসকে। মূলত শেখ হাসিনার আমলেই মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত হয় এবং আদালতের রায় তাঁর বিরুদ্ধে যায়।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ আছে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগষ আবার ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দেন বছরে ২০ শতাংশ। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করেছে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, এবং সব অভিযোগই দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়। এছাড়াও তাঁর তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সন্দেহের তালিকায় ছিল। প্রতিটি অ্যাকাউন্টেই কয়োকশো কোটি টাকা বিদেশ থেকে জমা পড়েছে। অথচ খালেদা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুযোগ নিয়ে সেই টাকা করমুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার ২০০০ সালের পর থেকে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রাপ্ত অর্থ কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস শান্তির নোবেল পান, একই সঙ্গে তাঁর সংস্থা গ্রামীণ ব্যাঙ্কও নোবেল পেয়েছিল। সেই সময় পর্যন্ত শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ঠিক ছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে সেই সম্পর্কে চির ধরে।
কিন্তু চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে ওঠে ছাত্র আন্দোলনে। অচিরেই সেই আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। অভ্যুত্থানের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইউনূস প্যারিস থেকে ঢাকায় ফেরেন এবং বাংলাদেশের তদারকি সরকারের দায়িত্ব গ্রহন করেন। পরবর্তী চারমাসের মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে থাকা যাবতীয় অভিযোগ তুলে নেয় বাংলাদেশ সরকার। এমনকি কর ফাঁকি দেওয়ার মতো অভিযোগগুলিতেও অব্যাহতি দেওয়া হয় মুহাম্মদ ইউনূসকে। তবে শান্তির নোবেলজয়ী ইউনূসের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ আর শান্ত হল না। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, হামলা, ছাত্র বিক্ষোভ, জেহাদি কার্যকলাপ বৃদ্ধি, চারদিকে অরাজক পরিস্থিতি কার্যত ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশকে। যার দায় নিতে হবে মুহাম্মদ ইউনূসকেই।
Discussion about this post