বাস, ট্রাক, চারচাকা গাড়ির চাকা ফেটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সাধারণত বদল করা হয়। কিন্তু আমরা জানি ট্রেনের চাকা ফেটে যাওয়ার কোনও ভয় নেই। তা বলে কী ট্রেনের চাকা নষ্ট হয় না? হলেই বা সেই চাকা কতদিন পর্যন্ত সচল থাকে? আবার একটি ট্রেনের চাকার ওজনই বা কত, কি দিয়ে তৈরি হয়, এই ধরণের নানান প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘোরে। আসুন আজ আমরা জানার চেষ্টা করি ট্রেনের চাকা সম্পর্কে নানান মজার অথচ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। ফলে সারাদিন গোটা ভারতবর্ষে অসংখ্য ট্রেন চলাচল করে। স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের আসা-যাওয়া দেখতে অনেকেই মজা পান। আমরা জানি সাধাররণ দুই ধরণের ট্রেন হয়। প্রথমত যাত্রীবাহী ট্রেন এবং দ্বিতীয়ত মালবাহী ট্রেন। ফলে দুটি ট্রেনের আকৃতিগত এবং প্রযুক্তিগত ফারাক থাকবে সেটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ যাত্রীবাহী ট্রেনের লোড বা ভার বহন ক্ষমতা কম হলেও গতিবেগ থাকে অনেক বেশি। অপরদিকে মালবাহী ট্রেনের ভারবহন ক্ষমতা অনেক বেশি থাকলেও গতিবেগ অনেক কম থাকে।
ভারতীয় রেলে বিভিন্ন ধরণের চাকা ব্যবহৃত হয়। একেকটির ওজন একেক রকম। রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরণের ট্রেনের ক্ষেত্রে একেকটি চাকার ওজন সাধারণত ২৩০ কেজি থেকে ৬৮০ কেজি হয়। আবার কোনও কোনও মালবাহী ট্রেনের চাকার ওজন ৯০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভারতে ট্রেনের চাকা তৈরি করে মূলত রেল হুইল ফ্যাক্টরি বেঙ্গালুরু। সেখানেই নানান ধরণের ট্রেনের চাকা তৈরি হয়, এবং রেল কোচ ফ্যাক্টরি ও মালগাড়ি কারখানাগুলিতে সরবরাহ হয়।
ভারতে ট্রেনের চাকা তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হয় বেশ কয়েকটি বিষয়। যেমন, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং ট্রেনটি কতটা ওজন বহন করবে সেগুলি। পাশাপাশি খেয়াল রাখা হয় ট্রেনটি প্রতিদিন কত কিলোমিটার চলবে, ট্রেনের সময়সীমা কতটা ইত্যাদি। সাধারণ যাত্রীবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে একেকটি চাকার গড় আয়ু সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর। একেকটি চাকা মোটামুটি ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ কিলোমিটার ছুঁটতে পারে। অপরদিকে, মালবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে একেকটি চাকার আয়ু ৮ থেকে ১০ বছর হতে পারে। মালবাহী ট্রেনের চাকা প্রায় আড়াই লক্ষ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুঁটতে পারে। ভারতীয় রেল সূত্রে জানা যায়, রেলকর্মীরা প্রতিটি চাকা ৩০ দিন অন্তর পরীক্ষা করেন। সামান্য ত্রুটি পাওয়া গেলেই সেটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে ভারতীয় রেলে অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। যেমন ডিজিটাল এক্সেল কাউন্টার সিস্টেম। এটির সাহায্যে চলন্ত ট্রেনের এক্সেল এবং চাকা গণণা করা হয়। পাশাপাশি এই যন্ত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলন্ত ট্রেনের চাকার ত্রুটিও বুঝে নিতে পারে। এই যন্ত্রটি রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, এবং তার উপর দিয়ে ট্রেন গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক্সেল এবং চাকা পরীক্ষা করে ডেটা পাঠিয়ে দেয় রেলের সার্ভারে। সেই ডেটা পরীক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ চাকা পরিবর্তন করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post