পঞ্জিকা মতে, আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় আয়োজিত হয় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। অনেকে এই দিনটিকে জগন্নাথ দেবের জন্মতিথি বলেও মেনে থাকেন। ওড়িষ্যার পুরিতে জগন্নাথ দেবের এই স্নানযাত্রা অনুষ্ঠান খুব ধুমধাম করে হয়ে থাকে। দেশ কেন দেশের বাইরে থেকেও বহু ভক্তের সমাগম হয় এই স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানে। স্নানযাত্রার দিন সকালে মন্দির থেকে জগন্নাথ , বলরাম, শুভদ্রা, বলভদ্র, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহকে গর্ভগৃহ থেকে বের করে আনা হয়। এরপর তাদের জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে অস্থায়ী একটি স্নান মণ্ডপ তৈরি করা হয়। সেখানে স্নানবেদীতে বিগ্রহদের রেখে প্রথা মেনে স্নান করানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, মন্দিরের উত্তরদিকের কূপ থেকে মোট ১০৮ কলস জল এনে বিগ্রহের উপর মন্ত্রোচ্চারনের মাধ্যমে ঢালা হয়। শুধু জলই নয়, সেই সঙ্গে থাকে দুধ, আতর ও চন্দন। সব মিশিয়ে বিগ্রহের অভিষেক করানো হয়। বৈদিক মন্ত্রোচ্চারনের সঙ্গে চলে উলু ও শঙ্খ ধ্বনিও। ওইদিন সন্ধ্যাবেলা ভক্তদের দর্শনের জন্য বেশভূষায় সজ্জিত করে সাজিয়ে তোলা হয়। এইদিন জগন্নাথ, বলরামকে গণেশের রূপে ও সুভদ্রাকে পদ্ম বেশে সাজিয়ে তোলা হয়। জগন্নাথ, বলরামের এই রূপকে বলে গজবেশ।
লোক মুখে শোনা যায়, স্নানের পর নাকি ভগবান অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই সময় ভগবানকে সুস্থ করার জন্য মন্দিরের ভেতরে একটি গোপন কক্ষে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রাকে রাখা হয়। সেখানে গিয়ে রাজবৈদ্য তাদের চিকিৎসা করেন। ভগবানের এই মুহুর্ত অনসর নামে পরিচিত। এই সময় ভগবান কোনও ভক্তকে দর্শন দেন না। ভক্তদের জন্য মূল মন্দিরের বেদীতে রাখা থাকে পটচিত্র। জ্বরের সময় রাজবৈদ্যর দেওয়া পাঁচন খেয়েই ধীরে ধীরে একপক্ষকাল অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন জগন্নাথ। এই সময় কলমি শাকের বিছানায় শোয়ানো হয় তিন বিগ্রহকে। অনসর মুহুর্ত চলাকালীন ভক্তরা ব্রহ্মগিরিতে থাকা অলরনাথ মন্দিরে যান। ভক্তদের বিশ্বাস, অনসর মুহুর্তে জগন্নাথ অলরনাথ রূপে অবস্থান করেন। এরপর ১৬ তম দিনে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা রথে চেপে গণ্ডিচা মন্দিরে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। চলতি বছর জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা পড়েছে, ৭ই আষাঢ় ইংরাজীর ২২ শে জুন । চলতি বছর ওই একই দিনে শুরু হচ্ছে অম্ববাচী তিথিও। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে পুরির মন্দিরে উপচে পড়া ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতন। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে মেলাও বসে। পাশাপাশি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রথযাত্রা উৎসবের দিনগুলিতে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয় মন্দির প্রাঙ্গণ।
Discussion about this post