বাঙালির কাছে ঘুরতে যাওয়া মানেই দি-পু-দা। অর্থাৎ, দিঘা-পুরী-দার্জিলিং। কিন্তু আগামীদিনে যদি এক ট্রেনে চেপে দিঘা হয়ে সোজাসুজি পুরী যাওয়া যায় তবে কেমন হবে? দিঘা-শঙ্করপুর মৎস ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যটক এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ উপকৃত হবে। সম্প্রতি রেল মন্ত্রক, দিঘা থেকে চন্দনেশ্বর হয়ে ওড়িশার জলেশ্বর পর্যন্ত নতুন রেলপথের সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রিয় পর্যটনকেন্দ্র তথা সৈকত শহর দিঘা। অপরদিকে বাঙালির অতি প্রিয় তীর্থস্থান তথা সৈকত শহর পুরীও রয়েছে তালিকায়। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি দিঘার একটি আলাদা অর্থনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। সেটি হল এখানেই আছে পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় মৎস বন্দর তথা মৎস নিলাম কেন্দ্র। দিঘা-শঙ্করপুর মোহনা থেকেই প্রতিদিন বিপুল পরিমান মাছ দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে রফতানি হয়। ফলে সাধারণ পর্যটক থেকে মৎস ব্যবসায়ী প্রায় সকলেই রেল পরিষেবার ওপর নির্ভরশীল, এ কথা বলাই বাহুল্য। দিঘা থেকে সহজেই হাওড়া বা কলকাতা আসা যায়। কিন্তু দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতের দিকে যেতে হলে হাওড়া হয়েই যাতায়াত করতে হল সকলকে। এতে যেমন সময় বেশি লাগে, তেমনই খরচ সাপেক্ষ। যা একটা বড় সমস্যা পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের। দিঘা থেকে ওড়িশার জলেশ্বর পর্যন্ত একটি নতুন রেলপথের তাই দীর্ঘদিনের দাবি দিঘা-শঙ্করপুরের মৎস ব্যবসায়ীদের। সূত্রের খবর, এবার তা পূরণ হতে চলেছে শীঘ্রই।
পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ওড়িশার জলেশ্বরের দুরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। এই সামান্য অংশ রেলপথে জুড়ে গেলে সমাজের একটা বিপুল অংশের মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি, হাওড়া থেকে দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতগামী ট্রেন খড়গপুর-বালেশ্বর ব্যস্ত রেলপথ এড়িয়ে আরও কম সময়ে যেতে পারবে। সব দিক থেকেই দিঘা-জলেশ্বর রেল প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও বিগত দুই দশকের বেশি সময় এই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী দীর্ঘদিন ধরেই রেল মন্ত্রককে এই রেলপথ নির্মানের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নিজে রেলমন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণবকে চিঠি দিয়েছিলেন। অবশেষে রেলমন্ত্রী এই প্রকল্পকে গ্রীণ সিগনাল দিয়েছেন বলেই খবর। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
রেল সূত্রের খবর, বহুদিন আগেই দিঘা-জলেশ্বর রেলপথ সম্প্রসারণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জমিজটের কারণে এই কাজ থমকে যায়। মোট ৭২ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন ৫০৭ একর জমি। এর মধ্যে ওড়িশার মধ্যে পড়ছে ৩৭০ একর এবং পশ্চিমবঙ্গে ১৩৭ একর জমি। রেলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঢিলেমির কারণেই জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি। তবে সম্প্রতি জমিজটের সমস্যার সমাধান অনেকটাই হয়েছে। রেল সূত্রে খবর, রেল বোর্ডের অনুমোদন পেয়ে এই প্রকল্পের চুরান্ত সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, দিঘা থেকে জলেশ্বর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ অনুমোদন হয়েছিল সেই ২০১১-১২ সালে। বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ১৫৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে জমিজটের কারণে এই প্রকল্প আর এগোয়নি। এবার জোর কদমে কাজ শুরু হয়েছে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক দিঘা – জলেশ্বর রেলপথ সম্প্রসারণ হলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে
- প্রথমেই বলে রাখি, পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে প্রস্তাবিত রেলপথটি। দিঘার সমুদ্র সৈকত যেমন আছে, তেমনই চন্দনেশ্বর মন্দির, ভুসান্দেশ্বর মন্দির, তালসারি-উদয়পুর সৈকত, বিচিত্রাপুর ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্য, বালাসোরের আশেপাশের অনাঘ্রাত সমুদ্র সৈকতগুলি এবং চাঁদিপুর ঘুরতে যাওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।
- হাওড়া থেকে পুরী অথবা দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেনের সময় কমবে প্রায় তিন ঘণ্টা। বর্তমানে পুরী বা দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন হাওড়া থেকে খড়গপুর, জলেশ্বর হয়ে যায়। এই রুট খুবই ব্যস্ত ট্রাফিক থাকায় বেশিরভাগ সময় ট্রেন লেট করে। নতুন রেলপথে. হাওড়া থেকে পাঁশকুড়া, তমলুক, কাঁথি, দিঘা হয়ে চন্দনেশ্বর হয়ে জলেশ্বরে গিয়ে হাওড়া-চেন্নাই মেন লাইনে গিয়ে মিশবে। ফলে বিকল্প রুটে বহু ট্রেন চালিয়ে হাওড়া-খড়গপুর-জলেশ্বর মেন লাইনে চাপ কমবে।
- দিঘা-শঙ্করপুর মৎস ব্যবসায়ীরা অনেক কম সময়ে এবং সহজে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে মাছ পাঠাতে পারবেন। পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষিপণ্য এবং জলজ পণ্য অনেক সহজেই নতুন রেলপথে দক্ষিণ ভারতে পাঠানো যাবে। ফলে এলাকার বাসিন্দারা অপেক্ষায় আছেন, দিঘা-জলেশ্বর নতুন রেলপথ নিয়ে।
Discussion about this post