১৯৭১-এর ইতিহাস মুছতে চায় ইউনুসের বাংলাদেশ। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আমলে তৈরি বাংলাদেশের সংবিধান কবরস্থ করার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেলল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বছরের শেষ দিনটি তাঁরা বেছে নিয়েছে বাংলাদেশের “সংবিধান” মুছে ফেলে তাঁদের মতো করে নতুন সংবিধান রচনা করার জন্য। মুখে তাঁরা বড় বড় কথা বললেও আদতে তাঁদের পাশে কেউ নেই। কারণ, এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পাশে দাঁড়ায়নি তদারকি সরকার। এমনকি বিএনপি ও জামাতের মতো রাজনৈতিক দলও ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র সংবিধান পরিবর্তনের দাবিতে, বরং অন্য বিষয়গুলিতে ছাত্র নেতাদের দাপট সবচেয়ে বেশি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ইসলামী মৌলবাদী নীতিতে চলছে। যা অনেকটাই জামাত-ই-ইসলামীর মত। ফলে এই জামাতের ইচ্ছাতেই বাংলাদেশ অনেকটাই পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে। শুধু ঝোঁকাই নয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে এবার প্রশিক্ষণ দেবে পাকিস্তানি ফৌজি কর্তারা। যা নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র হাসাহাসি চলছে। কারণ, পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশই হল প্রথম দেশ। যারা যুদ্ধে যাদের হারিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল, ৫৩ বছর পর তাঁদের কাছেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে চলেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরণের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পিছনে হাত রয়েছে জামাত-ই-ইসলামী ও তাঁদের সহযোগীদের।
১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধবাহিনী তৈরি করে পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। সেই মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার সাহায্য নিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়ে গিয়েছিল। যার ফলশ্রুতি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ঐতিহাসিকভাবে যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু আজকের নবীন প্রজন্ম সেই স্বর্ণালী ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এ টা হওয়ার ছিল। কারণ, সেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশের একটা অংশের মানুষ চায়নি দেশ স্বাধীন হোক। তাঁরা চেয়েছিল পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই থেকে যেতে। আর যারা এটা চাইতেন তাঁদের বাংলাদেশের মানুষজন রাজাকার বলে সম্বোধন করতেন। যদিও আরও কয়েকটি সংগঠন ছিল, যেমন আল বদর। যাই হোক, রাজাকার হোক বা আল বদর, তাঁদের বংশধররা আজও সেই পাকিস্তান প্রীতি ভুলতে পারেনি।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই প্রীতি পরিবাহিত হয়েছে রাজাকারদের রক্তে। তাই ওয়াকিবহাল মহলের অনেকেই মনে করছেন সেই রাজাকারের বংশধরেরাই কখনও বিএনপি, কখনও জামাত-ই-ইসলামী বা নব্য গঠিত বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তাঁদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে চাইছে। আর পাকিস্তানও সেই স্বপ্নকে ধোঁয়া দিতে দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা সাজিয়ে আসছিল। কিন্তু তাঁদের সামনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল একমাত্র আওয়ামী লিগ। যে দলের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মুজিবর রহমান। যিনি বিদেশ থেকে সর্বস্ব ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে সপে দিয়েছিলেন। তারপর কার্যত গোটা পরিবার-সহ প্রাণ দিলেন এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন দুই মেয়ে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। যে দুজনকে গত ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছে চোখের জলে।
যাই হোক, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আবারও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের একাংশ। সেই কারণেই আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে মুজিবের আমলে তৈরি বাংলাদেশের সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে নতুন সংবিধানের দাবি উঠছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তক থেকে ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছে তদারকি সরকার। এবার জানা গেল পাকিস্তানের সেনাকর্তারা বাংলাদেশে আসবেন যুদ্ধের কৌশল শেখাতে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, তলে তলে কোন পরিকল্পনা চলছে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের সেনা ক্যাডেটরা নানা ধরণের সামরিক কলা কৌশল শিখতে ভারতের আর্মি ট্রেনিং স্কুলগুলিতে আসতেন। বর্তমান সরকারের আমলে তা আর হবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে পাকিস্তান! যারা এখন তালিবান সেনার মারে পিছু হঠছে আফগান সীমান্তে। এই মুহূর্তে পাকিস্তান প্রবল চাপে আছে তালিবানি হামলা নিয়ে। কারণ জানা যাচ্ছে, তালিবানি সেনারা পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিতে হামলা করেছে। এই হামলায় একজন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশকে যারা সেনা প্রশিক্ষণ দেবে, তাঁরাই এখন চরম অস্বস্তিতে তালিবানি হামলার জেরে।
Discussion about this post