বুধবার মহাষষ্ঠীর রাতেই মন খারাপের খবর পেল গোটা দেশ। প্রয়াত হলেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা। মুম্বইয়ের ব্রিজক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। সেই সঙ্গে অবসান হল একটা যুগের। রতন টাটা, আজীবন শিল্পপতি তকমা পেলেও তিনি কোনও দিনও ধনী ব্যক্তিদের প্রথম ১০০ জনের মধ্যেই আসেননি। অথচ তিনিই ছিলেন টাটা সাম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট। ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন রতন টাটা। আর এই সময়কালটাই টাটা গ্রুপের স্বর্ণযুগ। ২০১২ সালে তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে এলেও টাটা গ্রুপ এবং টাটা ট্রাস্টের এমিরেটাস সদস্য হিসেবে রয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জানেন কি, বিখ্যাত টাটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও রতন টাটার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল টাটার মালিকানাধীন সংস্থা টেলকোর একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে?
সালটা ১৯৬২, রতন টাটা সবে মাত্র আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে আর্কিটেকচার ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিগ্রি এবং হার্ভার্ড অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরেছেন। তাঁর ঠাকুমার অনুপ্রেরণায় তিনি যোগ দেন টাটার অধীনে থাকা স্টিল কারখানা টেলকোতে। একজন সাধারণ শ্রমিকের মতোই তিনি ৮ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করতেন সেখানে। এমনকি বেলচা দিয়ে চুনাপাথরও তুলতেন। এভাবেই তিনি নিজেকে তৈরি করেছিলেন। এরপর টাটা গ্রুপের অন্যান্য সংস্থায় বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন রতন টাটা।
তত দিনে প্রখ্যাত শিল্পপতি তথা টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান জে আর ডি টাটা চিনে নিয়েছেন তাঁর পরিবারের অমূল্য রতনকে। ১৯৯১ সালে তাঁর হাতেই সঁপে দিয়েছিলেন টাটা গ্রুপের দায়িত্ব। আর সেটা যে ভুল পদক্ষেপ ছিল না, তার প্রমান পরবর্তী কয়েক বছরেই বুঝে গিয়েছিল দেশ। অটোমোবাইল থেকে শুরু করে স্টিল, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে বিমান পরিষেবাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন রতন টাটা। তিনি একদিকে যেমন টাটা মোটরসকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তেমনই জাগুয়ার, ল্যাণ্ডরোভারের মতো গাড়ি সংস্থা কিনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
তেমনই কার্যত দেউলিয়া হতে বসা এয়ার ইন্ডিয়াও টাটা গ্রুপের হয়ে অধিগ্রহণ করেন রতন টাটা। হোটেল ব্যবসা থেকে শুরু করে এফএমসিজি, ফিনান্স সেক্টর বা লাইফস্টাইল সব ক্ষেত্রেই টাটা ব্র্যান্ড আইকন হয়ে উঠেছে। তবে রতন টাটা সর্বসাধারণের কাছে সম্মানীয় হয়ে থাকবেন অন্য কারণে। তিনি যেমন দেশ গড়ার কারিগর, তেমনই সমাজের নিচুতলা থেকে ভবিষ্যতের তারকাদের তুলে আনার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন। কারণ টাটা গ্রুপের অধীনে থাকা টাটা ট্রাস্ট সারা বছরই জনহিতকর কাজে জলের মতো টাকা ব্যয় করে। শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য বা দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি, টাটা ট্রাস্ট দু হাত তুলে অর্থ সাহায্য করে আসছে। আর এই কারণেই রতন টাটা ধনী শিল্পপতিদের তালিকায় ঠাঁই পান না।
Discussion about this post