গত দুবছরে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত বারো জন জেহাদি।পাকিস্তানে খুন হচ্ছে একের পর এক কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এরা প্রত্যেকেই ছিল ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে। যার ফলে ভারতের পশ্চিম পাড়ের পড়শি দেশটিতে শুরু হয়েছে আতঙ্কের চোরা স্রোত। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই জল্পনার পালে হাওয়া লেগেছে তবে কি পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে পড়েছে ভারতের গুপ্তচর?
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, পাকিস্তানের মাটিতে ঘটে যাওয়া এই জঙ্গি নিধন যজ্ঞে হাত রয়েছে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা “র”-এর। শুধু পাকিস্তান নয়, সম্প্রতি কানাডা ও আমেরিকাতেও ভারতের কয়েকজন খালিস্তানি জঙ্গি ও গ্যাংষ্টারকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রেও ভারতের গুপ্তচরদের হাত রয়েছে বলে দাবি উঠেছে। যদিও স্বাভাবিকভাবেই ভারত সেই দাবিগুলি অস্বীকার করেছে। যদিও বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত দুবছরে পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে গুপ্তঘাতকরা। মৃত্যুবাণের শিকার হয়েছে অন্তত বারো জন জেহাদি নেতা। নিহতদের মধ্যে রয়েছে মূলত লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন, জইশ-ই-মহম্মদ ও খলিস্তানি জঙ্গি সংগঠনের নেতারাই। যার ফলে পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারতবিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির অনেকটাই শক্তিক্ষয় হয়েছে। গুপ্তঘাতকের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলি।
এই পরিস্থিতিতে কার্যত দিশেহারা অবস্থা তাঁদের। এবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, ভারতের গুপ্তচর সংস্থা “র” নজর ঘুরিয়েছে বাংলাদেশের দিকে। যেখানে মুহাম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকার বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে মুক্তি দিয়েছে। আবার বাংলাদেশে জুন-জুলাইয়ে বিপ্লব চলাকালীন অসংখ্য জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা জেল ভেঙে পালিয়েছে। যাদের মধ্যে এখনও নিখোঁজ ৭০০ জনের বেশি। যাদের মধ্যে রয়েছে ৭০ জন শীর্ষ জঙ্গিও। যা অবশ্যই ভারতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতবিরোধী হুমকি আসছে। ভারতের উত্তর পূর্বের সাতটা রাজ্য বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও আসচ্ছে। যা নিয়ে নতুন করে রণনীতি সাজাতে হচ্ছে ভারতের গুপ্তচর সংস্থাকে। কয়েকটি রিপোর্ট বলছে, ইতিমধ্যেই ভারত বাংলাদেশের ভিতর গোপন অভিযান শুরু করে দিয়েছে।
একসময় ভারতে জেহাদের বিষ ছড়াতে কোমর বেঁধে নেমেছিল পাকিস্তান। যেনতেন প্রকারে জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া বিষিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল ইউংস বা RAW জেহাদিদের কোমর ভাঙতে উদ্যোগী হয়। অপরদিকে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা থেকে শুরু করে সফলভাবে বিধানসভা নির্বাচন করানো জেহাদি গোষ্ঠীগুলিকে মোক্ষম জবাব দেওয়ার মতোই কাজ করেছে। এই কাজে যেমন ভারতীয় সেনা, বিএসএফ ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী দুর্দান্ত সফল। তেমনই পাকিস্তানের ভিতর ঢুকে সার্জিক্যাল ও এয়ার স্ট্রাইক করে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁরা ছেড়ে কথা বলতে নারাজ। কিন্তু গত দুই বছরে পাকিস্তানে থেকে যে জঙ্গি নেতারা ভারতবিরোধী জেহাদ কার্যকর করছিলেন, তাঁদেরই একে একে হত্যা করার ঘটনাও বেশ সাড়া ফেলেছে। ১২ জনের বেশি জঙ্গি নেতাকে কে বা কারা মারল সেটা জানতেই পারেনি পাক পুলিশ বা আইএসআই-এর মতো গুপ্তচর সংস্থা। অনেকেই মনে করছেন, র-এর গুপ্ত এজেন্টরাই এই কাজ সেরেছেন নিখুঁতভাবে। ফলে প্রশ্ন উঠছএ এবার কি তবে বাংলাদেশের পালা? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহলে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাকিস্তান বা পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আর সুবিধা করতে পারছে না জঙ্গিরা। ফলে শেখ হাসিনাবিহীন মুহাম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশকে হাতিয়ার করেই ভারতে জঙ্গি জাল বিস্তারের ছক কষেছে আইএসআই। এও জানা গিয়েছে আইএসআই কর্তারা ঘনঘন ইসলামবাদ থেকে ঢাকা যাতায়াত করছেন। অপরদিকে জেএমবি, হুজি, আনসারুল্লা বাংলা টিম, হিজবুত তেহরির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাঁদের উপরে থাকা নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। ফলে র-এর রাডারে এখন বাংলাদেশ। গোপন অভিযানের প্রস্তুতিও নাকি শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন দেখার, এর অভিঘাত কোন পর্যায়ে দেখা যায়।
Discussion about this post