দীপাবলী মানেই আলোর উৎসব। বর্তমান যুগে দীপাবলী রঙিন হয়ে ওঠে নানান ধরণের এলইডি টুনির দৌলতে। কালীপুজোর সময় রকমারি সেই আলোয় সেজে ওঠে প্রায় প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি মণ্ডপ, মন্দির। কিন্তু বাংলার ঐতিহ্য অন্য জায়গায়। যতই কালীপুজোর দিন সারা বাড়ি রঙিন এলইডি আলোর মালায় সাজানো হোক না কেন, সেখানে মোমবাতির আলো থাকবেই। কালীপুজোর আগের দিন যেমন চোদ্দ প্রদীপ জ্বেলে ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়, তেমনই কালীপুজোর দিন সারা বাড়ি মোমবাতি জ্বেলে সাজানোর রীতি বহু প্রাচীন। ফলে আজও মোমবাতির বাজার হারায়নি। তাই কালীপুজোর বহু আগে থেকেই রাজ্যের মোমবাতি কারখানাগুলিতে শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। কারণ, শুধু বাংলা নয়, আশেপাশের বহু রাজ্যেই রফতানি করা হয় ঐতিহ্যের মোমবাতি।
মালদা জেলার ইংরেজবাজার শহরের হায়দারপুর এলাকায় মোমবাতি কারখানাগুলি থেকে কার্যত গোটা দেশেই নানান ধরণের রঙ-বেরঙের প্যাকেটজাত মোমবাতি সরবরাহ করা হয়। সেখানে সারা বছরই ২০ থেকে ২৫ জন মহিলা কাজ করেন। এক মোমবাতি কারখানার মালিক রতন সাহা নিউজ বর্তমানকে জানালেন, উপকরণের দাম সামান্য বাড়লেও খোলা বাজারে প্যাকেটজাত মোমবাতির দাম বাড়েনি। তাই মোমবাতির বাজার এবার খুব ভালো। তাঁর দাবি, বাজারে আধুনিক টুনি বাল্ব ও চাইনিজ এলইডি-র রমরমা থাকলেও মোমবাতির কদর কমেনি। তবুও বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে বাইরের রাজ্যেও মোমবাতি পাঠানো যায় বলে তাঁর দাবি।
দীপাবলী উৎসব হোক বা নির্বাচন, মোটোমুটি সারা বছরই মোমবাতির কদর রয়েছে। বাজারে ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে প্যাকেটজাত মোমবাতি পাওয়া যায়। কিন্তু দীপাবলীর সময় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে। তাই রাতদিন এক করে কাজ হয় কারখানাগুলিতে। মূলত রথযাত্রার আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের মোমবাতি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। আধুনিক যুগে নানা ধরনের এলইডি টুনি বাজারে এসেছে। প্রতিটি বাড়িতেই এখন টুনির ছড়াছড়ি। কিন্তু দীপাবলীর উৎসবে মোমবাতি জ্বালানোর প্রচলনকে এখনও দাবিয়ে রাখতে পারেনি। রতন সাহার দাবি, তাঁর কারখানায় অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন মহিলা কাজ করে সাবলম্বী হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে বিনা পারিশ্রমিকে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরে কাজের দক্ষতা অনুযায়ী সকলকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। রতন বাবুর দাবি, আমরা চাই রাজ্য সরকার এই ধরনের কুটির শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিক। তাহলে বহু মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে আগামীদিনে মোমবাতি শিল্পের উপর ভর করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
Discussion about this post