উৎসবের আমেজ আসলেও পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে মায়ের আগমনের আনন্দ কোথাও যেন ক্ষীণ হয়ে পড়েছে এবার। সবার চোখ এখন ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত এক তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ন্যায়বিচার চাইছে গোটা বাংলা। আদালতে ন্যায় বিচারে আস্থা রেখেই ওই তরুণী চিকিৎসকের পরিবারও সুপ্রিম কোর্টের দরবারে হত্যে দিয়েছে। তাঁদের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বাম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে সরিয়ে এবার আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারকে নিয়োগ করলেন তাঁরা। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে ওই হতভাগ্য পরিবারের ন্যায় বিচারের জন্য লড়বেন বৃন্দা গ্রোভার।
হঠাৎ করে কেন এই পরিবর্তন? কে এই আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার?
বছর পঞ্চান্নের এই আইনজীবীর কর্মজীবনের দিকে লক্ষ্য রাখলে দেখা যাবে পূর্বে তিনি একাধিক জটিল মামলা লড়েছেন। বেশিরভাগ মামলা তিনি শিশু ও নারীদের উপর হয়ে যাওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করেছেন। তিনি দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে এবং দিল্লি বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে আইনের বিষয়ে মাস্টার্স করেন। প্রথম তিনি ১৯৯৯ সালে দেশে ফিরে ট্রায়েল কোর্টে অনুশীলন শুরু করেন বৃন্দা গ্রোফার। সেখান থেকে দিল্লি হাইকোর্টে এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে অনুশীলন শুরু করেন তিনি।
এবার জেনে নেওয়া যাক অতীতে তাঁর বিশেষ মামলার খতিয়ান…
১৯৮৭ সালে হাসিমপুরা পুলিশ হত্যা মামলা। ২০০৪ সালে ইসরাত জাহান মামলা। ২০০৮ এর কান্দামালে খ্রিস্টান বিরতি দাঙ্গা মামলা-সহ একাধীক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তার ভূমিকা অপরিসীম ছিল। এছাড়া ভারতবর্ষে সাড়াজাগানো বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় গুজরাট হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে তিনিই সাওয়াল করেছিলেন। আবার দিল্লিতে সংসদ ভবন হামলার ঘটনায় গিলানির হয়ে সাওয়াল করেও সাড়া ফেলেছিলেন বৃন্দা গ্রোভার। তবে তিনি শুধু মামলা লড়ার জন্য নয়, তিনি দেশের আইন প্রণোয়নেও সমান ভূমিকা পালন করেছেন।
২০১০ সালে নির্যাতন প্রতিরোধি বিলের সংশোধনি খসড়া তৈরীর অংশ ছিলেন তিনি। ভারতের ধর্ষণ আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ নিয়ম বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, পুরুষরাও ধর্ষণের শিকার হন। তাই ধর্ষণ আইন লিঙ্গ নিরপেক্ষ হাওয়া উচিৎ। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হয়েছিলেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। ইউক্রেনের তদন্তের জন্য স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য হিসেবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। এমনই দূঁদে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের কাছে আর জি কর কান্ডে মেয়ের ন্যায় বিচার চেয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবার। আর তিনি এই ন্যায়ের লড়াইয়ে বিনা পারিশ্রমিকেই সাওয়াল করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আর জি কর মামলার পরবর্তী শুনানি। আর সেদিনই প্রথমবার এই মামলায় সাওয়াল করতে চলেছেন ডাকসাইটে উকিল বৃন্দা গ্রোভার। জুনিয়র চিকিৎসকদের হয়ে যেমনটা করেছিলেন আরেক মহিলা আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিংহ।
Discussion about this post