তৃণমূলের ‘শুভেন্দু’-র পাল্টা বিজেপির ‘অনুব্রত’! বঙ্গ রাজনীতিতে এক নয়া ট্রেন্ড। ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের খুব একটা দেরি নেই। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গ রাজনীতি আটকে আছে কু-কথায়। বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত গাল পেরেছিলেন বোলপুর থানার আইসি-র মা ও স্ত্রীকে। আর শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। ভোট বৈতরণী পার করার এজেন্ডা কোথায়?
বোলপুর থানার আইসি-কে ফোনে অনুব্রত মণ্ডল কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণের ঘটনা। আইসি লিটন হালদারের মা ও স্ত্রীকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে ছাড়েননি বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। ফোনের কন্ঠস্বর যে তাঁরই তিনি সেটা নিজেই স্বীকার করেন। কিন্তু তবুও রাজ্য পুলিশ এখনও তাঁকে গ্রেফতার তো দূরের কথা, তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপও নেয়নি। যা নিয়ে একদিকে যেমন বীরভূমে নারী সম্মান মিছিল করল বিজেপি। তেমনই রাজ্য বিধানসভাতেও তুলকালাম কাণ্ড ঘটাল। বুধবার তৃণমূল নেতা অনুব্রতের পুলিশকে ‘হুমকি-ফোন’ কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপি পরিষদীয় দল। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন, এই যুক্তি দিয়ে বিরোধীদের প্রস্তাব খারিজ করে দেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যার প্রেক্ষিতে বিধানসভার ভিতরেই শুরু হয় স্লোগান, পাল্টা স্লোগান। বিষয়টা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সবকিছু ছাপিয়ে গোটা বিষয়টা হয়ে দাঁড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে বাক-যুদ্ধে।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিজেপির মতো ক্যাডারবেসড রাজনৈতিক দলে ব্যক্তির গুরুত্ব কম। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, যেন তিনিই দল। তাঁকে ঘিরেই বিজেপির সমস্ত কর্মকাণ্ড আবর্তিত হচ্ছে। গত সোমবার বীরভূমে নারী সম্মান যাত্রা করেন বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। উপলক্ষ্য অনুব্রত মণ্ডলের কু-কথা। দীর্ঘ মিছিলের পর তিনি একটি জনসভাও করেন। সেখানে তিনি বলেন, বোলপুরের আইসি-কে যে ভাষা বলেছেন, বিশেষ করে আইসি বোলপুরের স্ত্রী এবং মাকে নিয়ে মুখে আনা যায়? কানে শোনা যায়? বলুন। ওপারে দর্শক আসন থেকে উত্তর আসে, ‘না।’ বিরোধী দলনেতার সংযোজন, তাহলে কী করা উচিত? পুলিশ কেন অনুব্রতকে জেলে পুরলো না সেই প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন, এই রাজ্যে যদি যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী থাকতেন, খপাস করে ধরত, নিয়ে যেত। ১৪ দিন রিম্যান্ডে রাখত। প্রত্যেকদিন শুকনো লঙ্কা জ্বালানো হত। আর নাকে ঢোকানো হত।
আসলে বিরোধী দলনেতা বোঝাতে চেয়েছেন এই রাজ্যের পুলিশের মেরুদণ্ড কার্যত ভেঙে গিয়েছে। তাই পুলিশ আধিকারিক, তাঁর মা ও স্ত্রীকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেও পার পেয়ে যান তৃণমূল নেতারা। তাই এই রাজ্যেও যোগী আদিত্যনাথের মতো মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়োজন। সচেতন ভাবেই শুভেন্দু সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আছেন বলেই অনুব্রত মণ্ডল জেলে গিয়েছিল। তাঁকে আবারও জেলে যেতে হবে। অন্তত ৬ বছরের জন্য।
শুভেন্দু অধিকারী যতই বলুক। বাংলার রাজনৈতিক মহলের অভিমত, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অনুব্রত মণ্ডলকে সহসা গ্রেফতার করা হবে না। এখনও বীরভূম এবং আশেপাশের কয়েকটি জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের দাপট রয়েছে। তাই জেল থেকে ছাড়া পেয়েও তিনি স্বমহিমায় ফিরতে পেরেছেন। একটি অংশের দাবি, অনুব্রত ও বোলপুরের আইসির কথপোকথনের রেকর্ড কিভাবে ফাঁস হল, কিভাবে তা বিজেপি রাজ্য সভাপতির কাছে পৌঁছে গেল সেটা নিয়েই তদন্ত করছে রাজ্য পুলিশ। জানা যাচ্ছে, অনুব্রতর একটি মোবাইল এবং বোলপুরের আইসি-র দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে। অনুব্রতর শাস্তি বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হল কল রেকর্ড কিভাবে বাইরে বের হল! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে পাঁচটি বিষয় চিহ্নিত করে দিয়েগিয়েছিলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য। কিন্তু সপ্তাহখানেক পরও দেখা যাচ্ছে, বিজেপি সেই পাঁচ পয়েন্টে কোনও ইস্যু তৈরি করতে পারেনি। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধেই যত কথা বলছে। এটা চলতে থাকলে বিজেপি মূল ইস্যুগুলি থেকে অচিরেই সরে যাবে, যার ফায়দা তুলবে তৃণমূল কংগ্রেস।
Discussion about this post