আর অকৃতদার থাকছেন না রাজ্য বিজেপির রাফ অ্যান্ড টাফ নেতা দিলীপ ঘোষ। বিয়ে করছেন দলেরই কর্মী রিঙ্কু মজুমদারকে। দলের অন্তরেই কানা ঘোষ রাজ্যে পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ হলেও নিজের জীবনে গোলাপ ফুটিয়ে ফেলছেন দিলীপবাবু। বৃহস্পতিবার আচমকাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেনিং হয়ে যায় বিয়ে করছেন বঙ্গ বিজেপির পূর্বতন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্যজুড়ে অশান্তি, ওয়াকআপ আইন নিয়ে বিরোধিতা, সুপ্রিম কোর্টে চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে নতুন নির্দেশ, সবকিছুকে পিছনে ফেলে দিলীপ ঘোষের বিয়ের খবর সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে। কারণ ‘চিরকুমার’ দিলীপ যে তাঁর কৌমার্য ভঙ্গ করতে চলেছেন, সেই মর্মে বিজেপির অন্দরে কানাঘুষোও চলছিল। যদিও জানা যাচ্ছে সংঘ পরিবার চাইছিল না দিলীপবাবু বিয়ে করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হোক। কিন্তু দলেরই একাংশ দিলীপ ঘোষের পাশে ছিলেন, তারা উচ্ছসিত দিলীপ দার এই সিদ্ধান্তে। যদিও রাজ্য বিজেপির এই রাফ অ্যান্ড টাফ নেতা বিয়ে করছেন স্বয়ং এই সত্যতা স্বীকার করেননি তবে ঘনিষ্টমহল সূত্রেই খবর শুক্রবার অত্যন্ত ঘরোয়া অনুষ্ঠানে চার হাত এক হচ্ছে তাঁদের।
জানা যাচ্ছে, রিঙ্কু মজুমদার বিবাহবিচ্ছিন্না, সাধারণ গৃহবধূ। এবং এক পুত্রের জননী। তাঁর বছর পচিশের ছেলে সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, গত লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর দিলীপ যখন বেশ খানিকটা বিষণ্ণ, তখন বিজেপি নেত্রী রিঙ্কুই প্রথম একসঙ্গে সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন দিলীপ ঘোষকে। প্রথমে বিয়েতে রাজি না হলেও, পরে ভেবেচিন্তে নিমরাজি হন। পরে বৃদ্ধা মা পুষ্পলতা ঘোষের কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। মা পুষ্পলতা তাঁর আদরের ছেলে দিলীপকে “নাড়ু” বলেই ডাকেন। ছেলে দিলীপও বৃদ্ধা মাকে কাছ ছাড়া করেন না। নিউটাউনে নিজের কাছেই রাখেন। পাত্রী রিঙ্কুও থাকেন নিউটাউনে, শাপরজি পালনজি আবাসনে। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতা হিসেবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বড় দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে দিলীপ ঘোষকে। এমনকি তাকে বিধানসভা ভোটে লড়তেও হতে পারে এবং গোটা রাজ্যেই চষে বেড়াতে হবে তাকে।
ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এইরকম একটা সময়ে কেন বিয়ে করছেন দিলীপ ঘোষ? তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ছ’মাস আগেও তিনি সংসারধর্ম পালনের কথা ভাবেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনিও বুঝতে পারেন, জীবনের এই বৃত্তটিও পূর্ণ করতে হবে। তাই তিনি শেষ মুহূর্তে রাজি হয়েছেন। আরও জানা যাচ্ছে, গত ৩ এপ্রিল ইডেনে আইপিএলে কেকেআরের ম্যাচ দেখতে দেখতে এই সিদ্ধান্তে আসেন দিলীপবাবু। ওই ওই দিন ইডেনের ক্লাব হাউসের ১১ নম্বর বক্সে বসে খেলা দেখেন দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর হবু স্ত্রী-সহ হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এমনকি রিঙ্কুদেবীর ছেলেও ছিলেন।
দিলীপ ঘোষ, যার মুখেও লাগাম ছিল না কোনদিন এখন তাঁর জীবনেও লাগাম থাকল না। সেই জন্য তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং কথাও দিয়েছিলেন রিঙ্কু মজুমদারকে। কিন্তু দাদা দিলীপ ঘোষ যে বিয়ে করছেন সেটা আর আত্মীয়রাও জানেন না।
দিলীপ ঘোষের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের কাছে কুলিয়ানা গ্রামে । তিনি ছিলেন ভোলানাথ ঘোষ এবং পুষ্পলতা ঘোষের চার পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয়।তাঁর দাদা ও ভাইয়েরাও জানেন না দিলীপ বিয়ে করছেন। কিন্তু আজ বিয়ে করছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিলেন এমন একটা সময়, যখন বঙ্গ বিজেপি খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুর থেকে অন্য আসনে পাঠিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাতে শুভেন্দু বা সুকান্তর নাম উঠে এসেছে। যে দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বিজেপির উত্থান এবং বিস্তার হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। সেই সেই দিলীপ ঘোষ কে কীর্তি আজাদের কাছে হারতে হল একেবারে নতুন একটি লোকসভা কেন্দ্রে এসে। এমনও মনে করা হচ্ছিল এবার দিলীপ ঘোষকেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি করা হবে আবার নতুনভাবে রাজ্য দখলে ঝাপাবে বিজেপি। সেটা এখনো ঠিক হয়নি, কিন্তু তার মধ্যেই দিলীপ ঘোষের বিয়ে গিরে যে জল্পনা তা নিয়ে নতুনভাবে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। দিলীপ ঘোষ অবশ্যই বিয়ে করতে পারেন সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন প্রশ্ন রাজ্যে পদ্ম ফুল ফুটবে? নাকি গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন বিজেপির রাফ অ্যান্ড টাফ নেতা দিলীপ ঘোষ?
Discussion about this post