তিন দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নিজেদের সংগঠন জোরদার করার পর এবার তিনি উত্তরবঙ্গে ছুঁটে গেলেন ক্ষতে প্রলেপ দিতে। কি সেই প্রলেপ? উত্তরবঙ্গের মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, কর্মসংস্থানের দিক থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে বরাবরই পিছিয়ে উত্তরবঙ্গ। গত সোমবার তিনি ‘নর্থবেঙ্গল বিজনেস মিট-২০২৫’ নামে এক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই তিনি বলেন, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে চারটি আলাদা আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হবে- আমবাড়ি, ডাবগ্রাম, এথেরবাড়ি এবং জয়গাঁয়। মোট খরচ ৮০ কোটি টাকা।
পাশাপাশি মাটিগাড়াতে বাংলার ডেয়ারি হচ্ছে বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪০ কোটি খরচে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে এটি তৈরি হয়ে যাবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে উত্তরবঙ্গকে আরও শিল্পবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একাধিক প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধিদের বক্তব্য, নবান্নে বসে যিনি চাকরিহারাদের কান্না শুনতে পান না, ভোটের মুখে তিনিই উত্তরবঙ্গে গিয়ে কর্মসংস্থানের ফানুস ওড়াতে শুরু করলেন।
তবে যে শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে ভারতের এত মাথাব্যাথা, সেই শিলিগুড়ি করিডোরে বসেই বুধবার সফরের শেষদিনে মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গি ও জিহাদিদের ধরতে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিলেন পুলিশকে। বুধবার উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক ভবনে প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে সাবধান করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বাংলায় কোনও জঙ্গি যেন আশ্রয় নিতে না পারে! বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলার এসপি, আইসি এবং ওসিদের সর্তক থাকার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তাঁর রোষাণল থেকে বাদ গেলেন না খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি। বিগত কয়েকটি ঘটনা নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ‘ভেঙে পড়া’, পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা তীব্রতর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার, মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের নানা স্তরের কাজকর্ম নিয়ে মমতার উষ্মাপ্রকাশ। এমনকি ধমক দিলেন তাঁর পাশেই বসে থাকা রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তোমরা নিজেরাই যদি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করে নাও, তা হলে কী হবে? সে কাজ করতে চায়, তবু কাজ করতে দেবে না, এ আবার কী? পুলিশ কি নিজেদের মধ্যে গ্রুপ করে? গ্রুপ তো পলিটিক্যাল লিডারেরা করে। এটাই জেনে এসেছি।’’
অর্থাৎ তিনি রীতিমতো খোঁজখবর নিয়েই এদিনের সভায় আসেন। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার অভিযোগ জানিয়েছে নবান্নে। এবার পহেলগাঁও হামলার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্টের কথা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ ও প্রশাসনকে রীতিমতো সতর্ক করে বলেন, কোনও জঙ্গি যেন এই রাজ্যে শেল্টার না পায়। এর জন্য পুলিশকে পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে টহল দেওয়ার পরামর্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
Discussion about this post