কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় বিগত তিনমাস ধরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই আবহে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলিতে কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন রাজ্য সরকারের ভিত কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে, জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে শাসকদলের নেতারা প্রতিনিয়ত তোপ দেগে চলেছেন। এই আবহেই বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল চত্বরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উঠছে বিস্তর অভিযোগ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে একাধিক রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়ছে, রোগীরা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সেখানে বালুরঘাট হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোজই লক্ষ্য করা যাচ্ছে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়। রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের জন্য নির্দিষ্ট আসন দখল করে চলছে খোশগল্প, প্রকাশ্যেই চলছে ওষুধের স্যাম্পল বিতরণ। খোদ হাসপাতাল সুপারের নাকের ডগায় এই কর্মকাণ্ড চললেও তাঁর দাবি, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। ঘটনায় ক্রমশ ক্ষোভ জমছে বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের মধ্যে।
মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল কার্যত চিকিৎসকদের কাছে কমিশনের বাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। নিউজ বর্তমানের ক্যামেরায় ধরা পড়ল বিভিন্ন দৃশ্য। যে সময় বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের রোগী দেখার কথা, সে সময়ে তাঁরা ব্যস্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে কথা বলতে। অথচ বাইরে তখন অপেক্ষা করছেন অসংখ্য রোগী। প্রতিদিনই এই দৃশ্য চোখে পড়ছে এখানে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের। সম্প্রতি একাধিক মৃত্যুর অভিযোগে আলোড়িত বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল। রোগীদের অভিযোগ, সময়মতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কলবুক দেওয়ার অনেকটা পর আসেন ডাক্তারবাবু।
ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর আত্মীয়দের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ দেখা যায় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। এই আবহেই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ম্য নতুন মাত্রা যোগ করছে। অথচ, বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগের দাবি, “বিষয়টি আমার নজরে নেই। খোঁজ নিয়ে, ব্যবস্থা নেব”। সম্প্রতি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবির পাল্টা ১৩ দফা দাবি পেশ করেছিলেন। তৃণমূল মুখপাত্রের ১৩ দফা দাবিতে অন্যতম দাবি ছিল, চিকিৎসকদের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাক্ষাৎ বন্ধ করতে হবে। তিনি যে ফাঁকা দাবি করেননি, সেটা বালুরঘাট হাসপাতালের চিত্র থেকেই পরিস্কার। বালুরঘাটবাসীর একটাই প্রশ্ন, কবে শেষ হবে এই মৃত্যুমিছিল? কবে ফিরবে রোগীর প্রতি চিকিৎসকদের যত্নশীলতার সেই পুরোনো ছবি?
Discussion about this post