বজ্রআটুনী, মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ নামে এক অজ্ঞাতকুলশীল সংগঠনের ডাকে রীতিমতো কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল নবান্ন চত্বর। রাজ্য পুলিশের দাবি, এই কর্মসূচি পুরোপুরি বেআইনি, তবুও সেই কর্মসূচি বানচাল করতে কোমর বেঁধে নেমেছিল প্রশাসন। এই কর্মসূচিকে বেআইনি বলেও উল্লেখ করে পুলিশ।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ। এই অভিযানকে অবশ্য বাম ছাত্র সংগঠন বা আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা সমর্থন করেনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছিল এই সংগঠন কাদের ছাতার তলায় পরিচালিত হয়। অনেকেই দাবি করেছিলেন, এই ছাত্র সংগঠনের নাম আগে কখনও শোনেননি। কিন্তু এই সংগঠনের ডাকেই মঙ্গলবার তুলকালাম হল কলকাতা এবং হাওড়ায়। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকারও সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে প্রেস কনফারেন্স করে যে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেই সংগঠনের নাম বা অস্তিত্বের কথা আমরা এর আগে শুনিনি। আমরা খোঁজ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু তথ্য পেয়েছি। বলে কয়েকটি প্রিন্ট আউট তিনি দেখান সাংবাদিকদের।
যাইহোক, এহেন অজ্ঞাতকুলশীল এক সংগঠনের ডাকে মঙ্গলবার কয়েক হাজার সমর্থক হাজির হয়ে যায় হাওড়া এবং কলকাতার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। একাধিক জায়গা থেকে মিছিল করে এগোতে শুরু করে নবান্নের দিকে। কিন্তু পুলিশের প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। গত দুই-তিন ধরেই পুলিশ পরিকল্পনা করে কিভাবে ঠেকানো হবে এই নবান্ন অভিযান। রীতিমতো বজ্র আঁটুনি তৈরি করা হয় নবান্নকে ঘিরে। কলকাতা পুলিশের প্রায় ৬ হাজার পুলিশকর্মী, ২৬ জন ডিসি পদমর্যাদার আধিকারিক, পাশাপাশি হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের কয়েক হাজার পুলিশকর্মীও নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয় এদিন। হাওড়া এবং কলকাতার ৮টি এমন পয়েন্টকে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সোমবার মধ্যরাত থেকেই রাস্তায় গার্ডরেল এবং ফেন্সিং দেওয়া হয় মিছিল আটকানোর জন্য।মঙ্গলবার সকাল থেকেই যান নিয়ন্ত্রন করা হয়। হাওড়া ঢোকার আগেই বহু রাস্তায় লক্ষ্য করা গিয়েছে পুলিশি সতর্কবার্তা। বড় বড় ব্যানারে লেখা ছিল, হাওড়া সেতু বন্ধ, পরিবর্তে নিবেদিতা সেতু বা বালি ব্রিজের রাস্তা ধরার জন্য। আবার কোনও জায়গায় লেখা ছিল, দ্বিতীয় হুগলি সেতু বন্ধ থাকবে, পরিবর্তে বালি ব্রিজের রাস্তা ধরতে। বিভিন্ন জেলা থেকে কলকাতার দিকে আসা দূরপাল্লার বাসগুলিও বালি ব্রিজের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার এমন চিত্রও ধরা পড়েছে, নবান্ন অভিযানে আসা বিভিন্ন ছোট-বড় গাড়িকে পুলিশ মাঝরাস্তায় আটকে দিয়েছে।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে যদি শাসকদলও বিচার চায়, তাহলে এত কড়াকড়ি কেন? যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করেছেন, আর জি করের নির্যাতিতা বিচার পাবে। তিনিও চান দ্রুত প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়ুক। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিচার চেয়ে নবান্ন অভিযান করতে আসা ছাত্র সমাজকে আটকাতে পুলিশ লাঠিচার্জ, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ছত্রভঙ্গ করছে। আবার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্য পুলিশ দাবি করে, পুলিশ মোট ২২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি পুলিশের আরও দাবি, এটা কোনও ভাবেই ছাত্রদের অভিযান নয়, বরং রাজনৈতিক ইন্ধনেই এই নবান্ন অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এমনকি মিছিল শান্তিপূর্ণ হয়নি, একাধিক পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে আহত হয়েছেন।
বিরোধীদের দাবি, মানুষের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলনকে রাজনৈতিক তকমা লাগাতে তৎপর পুলিশ। এর পিছনে উদ্দেশ্যটা কী সেই প্রশ্নই তুলছেন বিরোধী দলগুলি থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের একাংশ
Discussion about this post