রক্তাক্ত গণবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রিত। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে। এবার ‘পলাতক’ শেখ হাসিনাকে সরকারিভাবে ফেরৎ চাওয়ার বার্তা দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। চলতি মাসের রবিবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তাঁর সরকারের ১০০ দিন পূরণ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। আর সেই ভাষণেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।’ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ঘটা সব অপকর্মের বিচার করবেন বলে এদিন প্রতিশ্রুতি দেন মহম্মদ ইউনূস। তিনি আরও বলেন, “শুধু হত্যাই নয়, গত ১৫ বছরে অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা একটি কমিশন তৈরি করেছি। কমিশনের দেওয়া বিবরণ অত্যন্ত মর্মান্তিক। জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ১৯ হাজার ৯৩১ জন আহত হয়েছেন।” গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি ভারতে আশ্রয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ হাসিনাকে হত্যা সহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত করে তাঁর বিচার শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। এরইমধ্যে হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকেও আর্জি জানিয়েছে ইউনূসের সরকার। কিন্তু ইন্টারপোল তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এদিন ইউনূস নিজে ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে বলে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ভারত সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বন্ধু হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে দেখছে না বলে দিল্লিকে জানিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পর যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশ ভালো চোখে দেখছে না বলে নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে ঢাকা। দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের নিরিখে তার এসব বন্ধ রাখা জরুরি। শেখ হাসিনাকে এ ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। তবে ভারত থেকে কোনো উত্তর পায়নি বাংলাদেশ। ট্রাইবুনাল কোটে হাসুনের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছে তাতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যখন পরোয়ানা জারি হবে তখন তিনি যে দেশে থাকবেন, সেই রাষ্ট্রের সাথে যদি প্রত্যর্পণ চুক্তি বা অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি থাকে তাহলে তারা এই চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য।’ শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গত অগাস্টেই তিনিসহ তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য সবার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলছেন, ‘শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কোনো পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়নি। সেক্ষেত্রে তাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ভারত সরকার দিতেই পারে।’ কূটনীতিকরা বলছেন, এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশই দিয়ে থাকে। যাদের পাসপোর্ট থাকে না তাদের নির্দিষ্ট একটা দেশে যেতে বা সেখান থেকে ফেরত আসার জন্য এটা দেয়া হয়ে থাকে। যদি শেখ হাসিনাকে সত্যি ভারত থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেয়া হয় তাহলে তিনি যদি অন্য কোনো দেশে যান, সেখান থেকে তাকে ফেরত আনা যাবে কি না সেই প্রশ্নও উঠছে দেশের রাজনীতিতে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বা বিএমজেপি। যার পতাকার রং ও নকশা অবিকল...
Read more
Discussion about this post