ভারতেই রয়েছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। তবে যাত্রী পরিবহণের নিরীখে ভারতীয় রেল সবচেয়ে আগে। ভারতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ২২ হাজার ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে ১৩ হাজারের বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী ট্রেনের ওপর ভরসা করেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য। ভারতীয় রেলে ৭,৩২১টি রেলস্টেশন রয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলি একেবারেই অনন্য। একটু খোঁজ নিলেই জানা যায় ভারতীয় রেলের ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য এবং আজব সব ব্যাপার। যেমন এই দুটি স্টেশন। এই দুটি রেল স্টেশনের আজব তথ্য জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন।
ধরুণ আপনি ট্রেন ধরতে এসেছেন একটি রাজ্য থেকে। সেই রাজ্যেই টিকিট কাটলেন, কিন্তু ট্রেন ধরলেন অন্য রাজ্য থেকে। আবার এমন একটি রেলস্টেশনও রয়েছে ভারতে যা দুটি রাজ্যের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। ফলে আপনি চাইলে ওই রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে দুটি রাজ্যেই পা দিতে পারবেন। কি অবাক হচ্ছেন তো?
ভারতীয় রেলের উধনা-জলগাঁও সেকশনের মধ্যে নবপুর রেলস্টেশন (NAVAPUR RAILWAY STATION) এমনই একটি স্টেশন। এই স্টেশনের মাঝ বরাবর দুটি রাজ্যের সীমানা চলে গিয়েছে। আরও ভালোভাবে বলতে হলে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট রাজ্যের সীমান্ত রেখা এই রেল স্টেশনকে আড়াআড়িভাবে ভাগ করেছে। উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্র রাজ্যের নন্দুরবার জেলায় গুজরাট সীমানা ঘেঁষা শহর নবপুর। এখানকার রেলস্টেশনটি এমন জায়গায় অবস্থিত যে অর্ধেকের বেশি অংশ পড়েছে পাশের রাজ্য গুজরাটে। নবপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য ৮০০ মিটার। এর মধ্যে ৫০০ মিটার গুজরাটের তাপি জেলায় এবং বাকি ৩০০ মিটার রয়েছে মহারাষ্ট্রে। এই রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার, রেলপুলিশের আউটপোস্ট মহারাষ্ট্রে অবস্থিত আবার স্টেশন মাস্টারের ঘর, টয়লেট অবস্থিত মহারাষ্ট্রে। মজার বিষয় হল এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি বসার চেয়ার রয়েছে, যেটি দুই রাজ্যের সীমানার মধ্যে পড়েছে। অর্থাৎ এই চেয়ারে যাত্রীরা বসলে কেউ মহারাষ্ট্রে থাকবেন কেউ আবার গুজরাটে থাকবেন।
আরও মজার বিষয় হল, এই স্টেশনে রেলের নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজি, হিন্দি, গুজরাটি এবং মারাঠি একসাথে চারটি ভাষায় ঘোষণা করা হয়। আরও একটি মজার তথ্য হল, দুই রাজ্যের পৃথক আইন মেনে এই স্টেশনের গুজরাট অংশে মদ নিষিদ্ধ এবং অন্য অংশে মহারাষ্ট্রের আইন মেনে গুটখা, পানমশলা নিষিদ্ধ। আপনাদের জন্য আরও একটি তথ্য জানিয়ে রাখি, ১২৮৩৩/১২৮৩৪ হাওড়া-আহমেদাবাদ সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি নবপুর স্টেশনে দাঁড়ায়। ফলে যারা এই ট্রেনে যাত্রা করবেন, তাঁরা এই মজার অভিজ্ঞতা নিতে ভুলবেন না।
এরকমই আরেকটি রেলস্টেশন আছে ভারতে। তবে সেটি অবস্থান একটু আলাদা। ওই স্টেশনের নাম ভবানী মান্ডি। এটি রাজস্থানের ঝালওয়ার জেলায় অবস্থিত একটি ছোট্ট শহর। এই স্টেশনটি মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান রাজ্যের মধ্যবর্তী অংশে পড়ছে। মূল স্টেশনের দক্ষিণ অংশ রাজস্থানের ঝালওয়ার জেলায় এবং উত্তর অংশ মধ্যপ্রদেশের মন্দাসৌর জেলায়। মজার তথ্য হল, ভবানী মান্ডি স্টেশনের টিকিট কাউন্টার মধ্যপ্রদেশে এবং স্টেশনে ঢোকার মূল প্রবেশদ্বার এবং ওয়েটিং হল রাজস্থানে। ফলে আপনি টিকিট কাটবেন মধ্যপ্রদেশ থেকে আর ট্রেনে উঠবেন রাজস্থান থেকে।
Discussion about this post