এখনও একমাস হয়নি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলাদেশে গঠিত হয়েছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার। এরমধ্যেই ভারতের উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করল বাংলাদেশ। তিস্তার জলবন্টন নিয়ে ভারতকে একপ্রকার হুঁশিয়ারিই দিয়ে দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জলসম্পদ উপদেষ্টা, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। তাঁর নেতৃত্বেই কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে গঠিত এই তদারকি সরকার। গণ অভ্যুত্থানের পর পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ এবং দেশত্যাগ করে এখন ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। আগে শেখ হাসিনা ভারতের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনুস সে পথে হাঁটবেন না সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। আর ভারতের আশঙ্কা সত্যি করে সেটাই হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের তদারকি সরকার ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করে দিয়েছে।
যেমন, তিস্তার জল বন্টন নিয়ে সে দেশের জলসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান করলেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিয়েছেন, আমি তিস্তার জলবন্টন নিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের সকলেরই তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করা উচিৎ। তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরেই বলেছেন, আমার আশা, এই চুক্তি দু’পক্ষই বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে কথা বলে মিটিয়ে নিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক জলবণ্টন আইন অনুযায়ী নদীর উপরের পার এবং নীচের পার সংলগ্ন দুই দেশের মধ্যে জল ভাগ করে নেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে, তা মানেই হবে। যদি তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে কোনও টালবাহানা হয় তবে বাংলাদেশ কী করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি ভারতকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বাংলাদেশের জলবন্টন উপদেষ্টার দাবি, “আমি যখন বলছি, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এনিয়ে আলোচনা করব তার মানে কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের পথেও হাঁটতে পারে। যদি চুক্তি না হয় তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনি নথিপত্র এবং নিয়মনীতির শরণাপন্ন হতে পারে”। মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার কথাতেই পরিস্কার, এবার বাংলাদেশ কোনও বিষয়েই ছেড়ে কথা বলবে না। ফলে ভারতের কূটনৈতিক কৌশল বদলাতে হবে।
তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু কোনও দেশই জলবন্টন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। কেন এত বছর ধরে এই সমস্যার সমাধান করা যায়নি, সেই বিষয়েও নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান। এই বিষয়ে তিনি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, জলবন্টন নিয়ে কিন্তু দুই দেশ সম্মত হয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধীতায় তা আর চুরান্ত হয়নি। বাংলাদেশের জলসম্পদ উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, এবার তিস্তার জলবন্টন নিয়ে দুদেশের আলোচনা শুরু হলে সেই খসড়া চুক্তি অনুযায়ী শুরু করতে হবে। অর্থাৎ ১৩ বছর আগের আলোচনা যেখানে ভেস্তে গিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধীতায়, সেখান থেকেই শুরু করতে চাইছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। তবে শুধু তিস্তা নয়, গঙ্গা-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক নদীর জলবন্টন নিয়ে আলোচনা চাইছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সেই চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং বাংলদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে বাধা দিয়েছিলেন। ওই খসড়া চুক্তিতে বলা হয়েছিল, মূলত শীতকালে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে তিস্তার জলের ৪২.৫ শতাংশ পাবে ভারত, ৩৭.৫ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ। এবার সেই চুক্তিই নতুন করে করতে চাইছে বাংলাদেশ। আর যদি তা সম্পন্ন না হয়, তবে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সরাসরি হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখলেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের জলসম্পদ উপদেষ্টা। এখন দেখার ভারত সরকার এই সমস্যা কিভাবে সামাল দেয়।
Discussion about this post