অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সরিয়ে এবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হলেন শুভঙ্কর সরকার। এর আগেও দেখা গেছে কংগ্রেসের ঘরে জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতৃত্বে সঙ্গে অধীর রঞ্জন চৌধুরী মতবিরোধ, কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে তাকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের কংগ্রেসের একমাত্র বড় ভরসা ছিল এই অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তবে এবারের লোকসভা ময়দানে খেলোয়াড়ের কাছে অবশেষে হার শিকার। দীর্ঘদিনের রাজত্ব হঠাৎ করেই শেষ। আর এবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ হাতছাড়া হলো অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। আর সেই স্থান পেল শুভঙ্কর সরকার।
কে এই শুভঙ্কর সরকার?
এর আগে শুভঙ্কর কংগ্রেসের কোন গুরু দায়িত্ব পালন করেছে?
অধীর রঞ্জন চৌধুরীর জায়গায় শুভঙ্কর সরকার হঠাৎ কেন? আর এই নিয়েই জল্পনা। কংগ্রেসের শুভঙ্কর সরকারের ভূমিকা কি?
শুভঙ্কর সরকারের জন্ম পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারে। সেখানেই তার বড় হয়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি পাস করেন। মূলত ছাত্র রাজনীতি থেকে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু। যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করার পর তিনি লাইব্রেরী সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। রাজনীতিতে দক্ষতা দেখিয়ে ১৯৯৩ সালে ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ এবং তার পাশাপাশি কংগ্রেসের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পান। অনেক রাজনৈতিকবিদ এর মতে শুভঙ্কর সরকার ছিলেন ছাত্র পরিষদের শেষ পরিচিত সভাপতি যার সময়কালে রাজ্যের ছাত্র পরিষদ বিভিন্ন আন্দোলন করতেন। তাকে অতীতে কংগ্রেসের বিভিন্ন বর্ষিয়ান নেতা এবং প্রথম সারির নেতাদের পাশে থাকতে দেখা যেত। কখনো রাজীব গান্ধী অথবা কখনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে, তার বিভিন্ন আলোচনার ছবি দেখা যেত। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর সাথে তার অনেক ছবি দেখা যায়, মূলত তিনি রাহুল ঘনিষ্ঠ বলেই কংগ্রেসে পরিচিত। ২০০৪ সালের পর থেকে তিনি কংগ্রেসের অনেক গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন যেমন ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যুব কংগ্রেস জাতীয় সাধারণ সম্পাদক, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন, এর পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে প্রদেশে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকায় তাকে দেখতে পাওয়া যায়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এআইসিসির সম্পাদক বা পালা চলে সচিব পদে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তার সাথে উড়িষ্যার সহকারী পর্যবেক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়ে তাকে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এআইসিসির সচিব হিসেবে তাকে নিয়োগ করা হয় এবং তার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং মেঘালয় দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও বিগত কিছু বছরে তার নির্বাচনের খুব একটা ভালো ফলাফল আসেনি। ২০১৬ সালে শ্রীরামপুর বিধানসভা আসনে এবং ২০২১ এ নোয়াপাড়া বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত হন। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা, প্রদেশ কংগ্রেসকে কোন পথে দিশা দেখাবে শুভঙ্কর সরকার। “সরকারের দেখানো পথে কি পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার গঠন করতে পারবে কংগ্রেস?” লোকসভা ও বিধানসভায় আসন সংখ্যা বাড়াতে পারবে পশ্চিমবঙ্গে?
Discussion about this post