– সব শেষে এল স্বীকারোক্তি। আদতেই কী বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন ছিল? নাকি আগের থেকেই পরিকল্পিত ছিল সব? ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্যে কে এই পরিকল্পনা করলো? অবশেষে সব নিজেই ফাঁস করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। তাও আবার বিশ্বমঞ্চে।
মাঝে সময়ের ব্যবধান মাত্র ছয় মাস। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই যেখানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু এর স্থায়িত্ব মাত্র ৬ মাস। এরমধ্যেই বাংলাদেশে কোটা বিরোধী প্রবল ছাত্র আন্দোলন এবং অচিরেই তা হয়ে উঠলো সরকার বিরোধী আন্দোলন। দফা এক, দাবি এক স্লোগানকে সামনে রেখে এক গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার সিংহাসনের। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন, এত কম সময়ে কীভাবে একটা ছাত্র আন্দোলন এই গণ অভ্যুত্থানের চেহারা নিল? ইউউতি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি মুজিবকন্যাকে সিংহাসনচ্যুত করার গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছিল? এবার সেই দাবিই কার্যত স্বীকার করে নিলেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান তাও আবার, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়েই।
অবশেষে মুখ খুললেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীযকালীন সরকারের প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ সভার অধিভিশনে বাংলাদেশের হয়ে এই প্রথমবার প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। এরপর তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু তথা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটননের আবেদনে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে আবার উপস্থিত ছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। আর সেখানেই ইউনূস কার্যত স্বীকার করে নিলেন যে, শেখ হাসিনা পতনের পেছনে কেবলমাত্র ছাত্র আন্দোলন দায়ি ছিল না, এর নেপথ্যে আগের থেকেই পরিকল্পিত ভাবনা ছিল। পাশাপাশি তিনি এও স্বীকার করেন, এই আন্দোলনকে সামনে রেখে অন্য কূটনীতি চলছিল। তবে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দল এর পিছনে ছিল না। ছিলেন এক ৩৫ বছরের যুবক।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কি বলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস…
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেন, “শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করতে আটঘাট বেঁধে নামা হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের জন্য আগাম পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। গোটা পর্বে কাজ করছিল এক অদৃশ্য হাত।”
সেই অদৃশ্য হাত কার? এই যুবক সম্পর্কেও তিনি জানান। হঠাৎ করে ভেসে আসা সেই নামটি হল মাহফুজ আব্দুল্লাহ। আন্দোলনের সর্বদা স্ব-শরীরে না থাকলেও, মাহফুজের সেই সময়কার ভূমিকা ছিল আন্দোলনের পথ নির্ধারণ, শ্লোগান এবং কর্মসূচি তৈরি করা। গোটা আন্দোলনের সেই সময় রাশ টেনেছিলেন এই যুবকই। যদিও মাহফুজ দলবদ্ধ কাজে বিশ্বাসী। তবে কে এই হাসিনার পতনের নেপথ্যে থাকা যুবক? বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাহফুজের জন্ম বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগড় উপজেলার ইচ্ছাপুর গ্রামে। পঠনপাঠন মাদ্রাসায়। কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে মাস্টার্স অফ আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেন। শুধু আইন নয় লেখালেখির জগৎকেও জীবনে প্রাধান্য দিয়েছেন এই যুবক। গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল একজন জনসংযোগ কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে।
তবে আন্দোলনের প্রথম সময় দেখলে কেবলমাত্র আন্দোলনটি ছিল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের। সরকারি চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সমর্থন জানিয়ে রাস্তায় নামে। আন্দোলন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। এই কাজটিই সুচতুরভাবে করেছিলেন মাহফুজ আব্দুল্লাহ। যার কারণে শেখ হাসিনা এখন দেশ ছাড়া। তবে আন্দোলনটি কেবলমাত্র কি মুক্তিযোদ্ধা বা কোটা বিরোধী ছিল? নাকি প্রথম থেকেই ঈগলের চোখ সিংহাসন দখলে ছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে। এখন প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকার প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্টের সামনেই এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব কেন সামনে আনলেন মুহাম্মদ ইউনূস? তবে কী এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে মার্কিন হাত আছে? বিশেষ করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে যখন শেখ হাসিনা এবং আমেরিকার মধ্যে প্রকাশ্য টানাপোড়েন চলছিল।
Discussion about this post