ধীরে ধীরে কট্টরপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ? এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন ক্ষমতায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই যে বাংলাদেশে পালাবদল হল, সেই বাংলাদেশেই এখন ব্রাত্য হতে চলেছে বাংলা ভাষা। সম্প্রতি ইউনূস সরকার বাংলাদেশের স্কুল পাঠ্যক্রমে আরবিকে অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশিকা জারি করেছে। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এবার পড়ুয়াদের আরবিও পড়তে হবে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলোর নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। এবার বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও সরিয়ে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ফিল্ম সিটি থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। এখনেই শেষ নয়, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে সরছে মুজিব এবং মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা কাব্য ও রচনা। আগামী বছর থেকে আর পাঠ্যবইয়েও থাকছে না ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুজিবের রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে মুজিব-হাসিনার নাম-স্মৃতি সব কিছু মুছে ফেলতেই কি এই সিদ্ধান্ত? ইহিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে মুজিবর রহমানের হাত ধরেই পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানকে মনে রাখার জন্যই বঙ্গবন্ধু নাম দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মুদ্রাতেও মুজিবরের ছবিই রয়েছে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর যাবতীয় রোষ গিয়ে পড়েছিল তাঁর পরিবারের উপরে। একদিকে প্রাণভয়ে শেখ হাসিনা যেমন দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তেমনই আওয়ামী লিগের বহু নেতা-নেত্রীও দেশ ছাড়েন। যদিও আন্দোলনকারীদের রোষ গিয়ে পড়ে শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির উপর। বাংলাদেশ জুড়ে ভাঙচুর করা হয় তাঁর মূর্তি। লুঠ করা হয় মুজিব সংগ্রহশালা। এবার পাঠ্যবই থেকেও বাদ পড়লেন বঙ্গবন্ধু। গত সোমবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে কয়েকজন নতুন উপদেষ্টা শপথ নেন। সেই সময়ই রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন-এর দরবার কক্ষ থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ছবি। যা নিয়ে পরে পোস্ট করেন গণঅভ্যুত্থানের তথাকথিত ‘মাস্টারমাইন্ড’ মাহফুজ আলম। তিনি লেখেন, ‘৭১ পরবর্তী ফ্যাসিবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দরবার হল থেকে সরানো হয়েছে। এটা আমাদের কাছে লজ্জার যে ৫ অগস্টের পরে বঙ্গভবন থেকে তাঁর ছবি আমরা সরাতে পারিনি। ক্ষমাপ্রার্থী।’ এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে কট্টরপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত হতে শুরু করেছে। একদিকে যে বাংলা ভাষার থেকে বেশি গুরুত্ব পেতে চলেছে আরবি ভাষা। অন্যদিকে ইতিহাসও প্রায় পরিবর্তন করা হচ্ছে নিরবে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে ফের পাকিস্তানেই মিশতে চাইছে বাংলাদেশের বর্তমান মৌলবীরা। কারণ বাংলাদেশের শিক্ষা দফতরের দাবি করছে, ‘আলিম-ওলামাদের পরামর্শ মেনে’ মাধ্যমিক স্তরে আরবি ভাষা-কে বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যদিও মুজিবের ছবি সরানো নিয়ে দেশের অন্দরে গোড়াতে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিএনপি নেতা রুহুর কবির রিজভি জানান, মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি। পরে যদিও ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন রিজভি। জানান, হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে মুজিবের ছবি রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। বর্তমানে সেই ফ্যাসিবাদী আইন কার্যকর থাকতে পারে না। দুঃশাসনের কোনও চিহ্ন রাখা উচিত নয়।
Discussion about this post