ডিএনআই বা ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স, বাংলায় বলতে হলে বলা যায় গোয়েন্দা বিভাগের অধিকর্তা। তাও যে সে দেশের নয়, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকার। সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে ক্ষমতায় ফিরেছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও শপথ নেবেন জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কিন্তু ইতিমধ্যেই তিনি তাঁর নতুন ক্যাবিনেট গুছিয়ে নিচ্ছেন। একে একে বেছে নিচ্ছেন কে কে হবেন তাঁর সহকর্মী। আমেরিকায় প্রেসিডেন্টই সব, সেখানে কোনও মন্ত্রী থাকেন না। বিভিন্ন মন্ত্রকে তাই সচিব নিযুক্ত হন সেনেটর বা সংসদরা। আবার বাইরে থেকেও কাউকে সচিব নিযুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন মুলুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ অবশ্যই গোয়েন্দা প্রধান। তিনিই প্রেসিডেন্ট এবং দেশবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিন্ত করেন। এবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পদে নিয়োগ করছেন এক “হিন্দু” মহিলাকে। যিনি আমেরিকার কংগ্রেসের একমাত্র হিন্দু সদস্য। তাঁর নাম তুলসী গ্যাবার্ড। তবে তুলসী নাম দেখে অনেকে তাঁকে ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ ভেবে ভুল করতে পারেন। মোটেও তিনি ‘ভারতীয় বংশোদ্ভূত’ নন। আমেরিকাতেই জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা। একসময় আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে কর্মরত ছিলেন। ইরাকে যুদ্ধের বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে তুলসীর। ৪৩ বছরের গ্যাবার্ড আমেরিকান সামোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তুলসী বড় হয়ে ওঠেন মূলত হাওয়াই দ্বীপে। এখানে থেকেই হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু। প্রথম দিকে তুলসী ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক সদস্য। জো বাইডেন প্রশাসনেও কাজ করেছেন। কিন্তু বাইডেন সরকারের বিদেশ নীতি এবং বর্ণ বিদ্বেষ নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২২ সালে দল ছাড়েন তিনি। এরপর যোগ দেন ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টিতে।
আমেরিকার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রথম হিন্দু সদস্য হিসেবে নজর কাড়েন তুলসী গ্যাবার্ড। সেবার তিনি ‘ভগবদগীতা’কে স্বাক্ষী রেখে শপথ গ্রহণ করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, হিন্দুধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম! গীতা শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ। একসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ‘ভগবদগীতা’ উপহার দিলেছিলেন। উল্লেখ্য, তুলসী ২০২০ সালে বাইডেনের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্দরে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন। এরপর ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছেড়ে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন। উত্তর ক্যারোলিনায় ট্রাম্পের এক সমাবেশে প্রকাশ্যে তার রিপাবলিকান পার্টির সদস্যপদ ঘোষণা করেন এমনকি হ্যারিসের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রস্তুতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
তুলসী গ্যাবার্ড হোয়াইট হাউসের প্রধান গোয়েন্দা উপদেষ্টা হিসেবে ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালনা করার সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখবেন। তিনি আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফের সাথে কাজ করবেন। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তুলসী গ্যাবার্ড আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান হওয়ায় ভারতের অনেক সুবিধা হবে। কারণ, তিনি প্রকাশ্যেই ভারত বন্ধু এবং নরেন্দ্র মোদির ফ্যান। ফলে ভারতের আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সূত্র আরও শক্তিশালী হবে বলেই অভিমত কূটনৈতিক মহলের।
Discussion about this post