গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশে। গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে বসবাসকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতনীদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সনাতন হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু। তাঁদের উপর এই হামলার ঘটনার তাই বারবার নিন্দা করে আসছে ভারত। এমনকি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার এই বিষয়ে কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় বারংবার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মাঝে একাধিক বার আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সনাতনী হিন্দুদের একাধিক সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। এরপরই আসল মুখোশ বেরিয়ে পড়ে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলির। রীতিমতো প্রকাশ্য সভা করে তাঁরা হুমকি দিচ্ছেন। সম্প্রতি কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার মধ্যে একটি ভিডিও নিজের এক্স হ্যন্ডলে পোস্ট করেছেন ইসকনের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র রাধারমণ দাস মহারাজ। তিনি ওই ভিডিও পোস্ট করে ট্যাগ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আমেরিকার সদ্য নিযুক্ত গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডকে। ওই পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘মহম্মদ ইউনুসের সরকারকে বাংলাদেশি মুসলিমরা আল্টিমেটাম দিয়েছে যে ইসকনকে নিষিদ্ধ না করা হলে ভক্তদের ধরে ধরে খুন করতে শুরু করবে তারা।
SOS to dear @pmoindia @narendramodi ji & @TulsiGabbard,
Bangladeshi Muslims have given ultimatum to Md. Yunnus to ban ISKCON or they will start catching & brutally killing ISKCON devotees. The exact translation is: “We demand that government ban’s ISKCON. If ISKCON is not banned… pic.twitter.com/g0NOKzzF0i
— Radharamn Das राधारमण दास (@RadharamnDas) November 15, 2024
বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি ঢাকা উলেমা ঐক্য পরিষদ ইসকনের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল। সেখানেই ভাষণ দেওয়ার সময় এক বাংলাদেশি মৌলবাদী নেতা বলেন, ইসকনকে যদি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না করা হয়, তাহলে দেশের রাস্তা ঘাটে হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হবে। এরকম চরম হুমকি পাওয়ার পরই ইসকনের মুখপাত্র রাধারমণ দাস সরাসরি সেই ভিডিও ট্যাগ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট এবং হবু মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। উল্লেখ্য, হবু মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ইসকনের সদস্য। ফলে খুব শীঘ্রই এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা এবং ভারত কোনও কড়া পদক্ষেপ নেবে বলেই আশা প্রকাশ করছে ইসকন কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনার পরই বাংবাদেশে অবস্থিত সংখ্যালঘু হিন্দু সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন পরিষদ ঢাকাতে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে। সেখানে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘকে বা ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার কথা বলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চলছে। কিছু ব্যক্তি এই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তাঁদের আরও দাবি, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ঢালাওভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আওয়ামী লিগের সদস্য পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
Discussion about this post