বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতীয় দূতাবাস কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি সেখান থেকে ভিসা প্রদান কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়েছিল কিছুদিনের জন্য। পরে অবশ্য ভিসা প্রদান চালু হয়, তবে তা খুবই সীমিত আকারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতের ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা বহুমুখী, আসুন জানার চেষ্টা করি কি কি অসুবিধার মুখোমুখী হতে হচ্ছে ভারতের ভিসা প্রার্থী বাংলাদেশী নাগরিকদের।
বর্তমান বাংলাদেশে বিশ্বের বহু দেশের দূতাবাসই নেই। ফলে বাংলাদেশ থেকে সেই সমস্ত দেশে যেতে হলে একটি নিয়ম রয়েছে। সেটা হল সেই সব দেশে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের জন্য ভিসার আবেদন করতে হলে নিকটতম দেশের সাহায্য নিতে হয়। যেমন এ ক্ষেত্রে ভারতের ভিসা থাকলে সেটা নিয়ে ওই সমস্ত দেশের ভিসার আবেদন করতে হবে। আগে তাই হতো, পড়াশোনা, চাকরি বা অন্যান্য কাজের জন্য বাংলাদেশীরা ভারতে এসে ওই সমস্ত দেশের ভিসার আবেদন করতেন। কিন্ত বর্তমানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। আবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা এবং টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য ভারতের তরফে এখন ভিসা দেওয়া বন্ধ কার্যত বন্ধ। বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে বলা হয়েছে, বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরীকালীন মেডিকেল ভিসা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত ট্রাভেল-সহ বেশ কিছু ভিসা দেওয়া বন্ধ রয়েছে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌসিফ হাসান জানিয়েছেন, যে সমস্ত বাংলাদেশী ভারতের ভিসা পাচ্ছেন না, এমন তৃতীয় দেশের ভিসা প্রার্থীদের জন্য দিল্লির পরিবর্তে বিকল্প চিন্তাভাবনা চলছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ থেকে ভিসা গ্রহণের সুবিধার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। জানিয়ে রাখি, শেখ হাসিনার পতন এবং দেশত্যাগের পরই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। দুই দেশ সেই ১৯৭১ সালের পর কাছাকাছি এসেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ও অন্যান্য আদানপ্রদানও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভিসা ফ্রি বা ভিসা অন অ্যারাইভাল চালু করে দিয়েছে পাকিস্তান।
ফলে পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে যারা অন্যান্য দেশের দীর্ঘমেয়াদী ভিসার আবেদন করছেন, তাঁরা এখন ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তানের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। যদিও বাংলাদেশীদের কাছে ইউরোপ বা আমেরিকার মতো দেশে যেতে হলে ভারতই ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা। সেখানে পাকিস্তান থেকে ইউরোপের বহু দেশ বা আমেরিকার ভিসা পাওয়া সহজ নয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি বা ইসলামিক দেশগুলিতে যেতে পাকিস্তানে ভিড় করছেন বাংলাদেশীরা। আবার কেউ কেউ ভিসা পেতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা ভিয়েতনামেও যাচ্ছেন বাংলাদেশী নাগরিকরা। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য ভারতীয় ভিসা খুব শিগগির চালু হচ্ছে না। শুধু যাঁদের জরুরি প্রয়োজন তাঁদের ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যদিও এর জন্য তিনি লোকবল কম থাকাকেই দায়ি করেছেন।
Discussion about this post