সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট শপথ নেবেন জানুয়ারি মাসের শেষে দিকে। কিন্তু এখন থেকেই পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলগুলি গভীর চিন্তায় পড়েছেন। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য ক্যাবিনেটে যারা স্থান পাচ্ছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ভারত-বন্ধু এবং পাকিস্তান বিরোধী বলেই পরিচিত। অপরদিকে স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বাংলাদেশকে ছেড়ে কথা বলবেন না, সেটাও যত দিন যাচ্ছে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। এবার ট্রাম্পপন্থী পাকিস্তান বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নেতা যা বললেন, তা বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বুকে ভয় ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান বংশোদ্ভূত মার্কিন রাজনীতিবিদ সাজিদ তারার ট্রাম্পের বাংলাদেশ ভিসন নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।
সাজিদ তারার আমেরিকায় মুসলিম ফর ট্রাম্প নামে এক সংগঠন পরিচালনা করেন। এই সংগঠন ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিশাল বিজয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সাজিদ তারার পিটিআই-কে জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন। তাঁর দাবি, ট্রাম্প পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশেষ করে আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে, যা সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নিয়মিত হামলার প্রতিবাদ ও অভিযোগের জন্ম দিয়েছে সেই বিষয়ে তিনি খোঁজখবর রাখছেন।
মার্কিন প্রেসেডেন্ট পদে আসীন হয়েই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির পুনর্মূল্যায়ন করবেন, এটা বলাই বাহুল্য। সাজিদ তারার জানিয়েছেন, দ্বিতীয় মেয়াদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব রাজনীতি উভয়ের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্বেই এক ট্যুইট করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরাকরের প্রতি খুব একটা সন্তুষ্ট নন। তিনি সরাসরি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণ ও অত্যাচারের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এটা হতে দিতেন না। ফলে ক্ষমতায় আসার পর তিনি যে কিছু পদক্ষেপ করবেন সেটা নিশ্চিতই ছিল। এবার ট্রাম্পপন্থী মার্কিন রাজনীতিবিদ সাজিদ তারার সেই বিষয়ে আরও স্পস্ট করলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল. বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক কোনও কালেই ভালো ছিল না। ২০১৬ সালেই ইউনূস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে সরাসরি সমর্থন করেছিলেন। আবার চলতি বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ও তিনি নিউইয়র্কে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন জো বাইডেন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে। এড়িয়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ফলে ট্রাম্পের সঙ্গে যে ইউনূসের একটা দূরত্ব আছে সেটা পরিস্কার। যা নিয়ে এখন চিন্তায় বাংলাদেশের তদারকি সরকার। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে স্পষ্ট করেছে যে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়নে সরকারের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশের দমন-পীড়ন এবং সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করে এবং এই ধরনের বিক্ষোভের সহিংস প্রতিক্রিয়ায় সরকারী জড়িত থাকার বিরোধিতা করে। অর্থাৎ, বাইডেন প্রশাসনও শেষ মুহূর্তে ইউনূসের নীতির বিরোধীতা করছে। যা ট্রাম্পের জমানায় আরও বড় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফিরে আসতে পারে।
Discussion about this post