চলতি বছরের পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশের মসনদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লিগ। সেই সঙ্গে গদিচ্যুত হন আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে এসেছে। তবে পড়শি দেশের একটা অংশ আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করতে চাইলেও বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কূটনৈতিক চাপও রয়েছে। ফলে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার আইনি রাস্তায় হাঁটা শুরু করেও থমকে দাঁড়াল মহম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকার। সূত্রের খবর, আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইনে যে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তবর্তীকালীন সরকার, বুধবার ঢাকায় হওয়া উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে সেটি অনুমোদন করা হয়নি। অর্থাৎ, এক পা এগিয়েও পিছিয়ে এল ইউনূসের তদারকি সরকার। কিন্তু কেন এই পশ্চাৎধাবন?
জানা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লিগের ভূমিকা অস্বীকার করার পাশাপাশি প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটিকেই নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব। কিন্তু প্রথমেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বিএনপি-সহ কয়েকটি দল। যা নিয়ে বিএনপি-র বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন ছাত্র নেতারা। উল্লেথ্য গত সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টা তথা ছাত্র নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে দাবি করেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আওয়ামী লিগকে যাতে নিষিদ্ধ না করা হয়, তার জন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে সরাসরি চাপ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেছেন, আমরা যখন সরকার পক্ষ থেকে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ তুলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলির অনেকেই তাতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এখানেই শেষ নয়, ঢাকা সফরে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ক্যাথেলিন ওয়েস্ট এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাজনীতিতে আওয়ামী লিগেরও সমান সুযোগ পাওয়া উচিৎ।
আমরা আশা করি অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তার একটি রূপরেখা তুলে ধরবেন। এর আগে, জিরো পয়েন্টে আওয়ামী লিগের কর্মসূচি আটকানো এবং হামলার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছিলেন, আমেরিকা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকারকে সমর্থন করে। সবমিলিয়ে আওয়ামী লিগ নিয়ে ঘরে বাইরে প্রবল চাপে পড়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তবুও গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার ক্ষমতা দিতে চান।
এর জন্য ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি সংশোধন করা হবে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু আদতে দেখা গেল, পরদিন অর্থাৎ বুধবারই তাঁর দাবিকে মান্যতা দিল না ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টামণ্ডলী। বাংলাদেশের আইনের সংশোধনীর ওই ধারায় সিলমোহর দেওয়া হল না। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি কেন আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আপত্তি জানাচ্ছে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিএনপি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির আপত্তির কারণ আওয়ামী লিগকে রক্ষা করা নয়। বরং বিএনপি-সহ অন্য দলগুলির আশঙ্কা, শেখ হাসিনার পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হলে তাতে আওয়ামী লিগের পুনরুজ্জীবন সহজ হয়ে যেতে পারে। সাবেক শাসক দল শহিদের মর্যাদা পেয়ে যাবে। ফলে অন্য নাম নিয়ে তারা নির্বাচনের ময়দানে বাকিদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
Discussion about this post