গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার বিপ্লবের পর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদলবল ভারতে পালিয়ে আসেন। তাঁর দল আওয়ামী লিগ কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বাংলাদেশে। আওয়ামী লিগের বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা-নেত্রী হয় বিদেশে পালিয়ে গেছেন, না হয় তাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি এখন কার্যত অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে। নেতা না থাকায় দলীয় কর্মী সমর্থকরাও বিভ্রান্ত। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে আওয়ামী লিগ কি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবে? নাকি শেখ হাসিনার দলকে ছাড়াই খোলা ময়দানে গোল দেবে বিএনপি।
ছাত্র বিপ্লব ও গণ অভ্যাউত্থান পর্ব মিটেছে তিন মাসের বেশি হল। সভানেত্রী শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামী লিগের শীর্ষ নেতৃত্ব, যারা বিদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন তাঁরা ধীরে ধীরে কাজ শুরু করছেন। এর জন্য তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার কয়েকটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামী লিগের ভেরিফাযেড ফেসবুক ও এক্স হ্যান্ডেল থেকে প্রতিনিয়ত নির্দেশিকা জারি হচ্ছে দলের সভ্য সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। ওই ভাইরাল অডিও ক্লিপগুলিতে শোনা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা দলের সমর্থকদের নানারকম টিপস দিচ্ছেন। আন্দোলনের রূপরেখা দিচ্ছেন। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে হাসিনার দল কি করবে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
সদ্য সমাপ্ত বিপ্লবে গণহত্যার দায় রয়েছে আওয়ামী লিগের ওপর। যা নিয়ে এখনও বাংলাদেশের জনমানসে একটা ক্ষোভ রয়েছে। বিভিন্ন মঞ্চ থেকে দাবি উঠছে, হাসিনাকে ক্ষমা চাইতে হবে কথিত গণহত্যার জন্য। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অবশ্য চাইছেন আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করে নেতাদের বিচার করতে। সেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, নিষিদ্ধ করার দাবি এখনও মানা হয়নি। কারণ এই ইস্যুতে আওয়ামী লিগের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তাঁরা শেখ হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ করতে নারাজ। অপরদিকে আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন “ছাত্র লিগ”-কে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। আবার, তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কার জানিয়েছেন, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লিগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত হাসিনার যে কয়েকটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে তাতে তাঁকে ক্ষমা চাইতে শোনা যায়নি। বরং তিনি স্বমহিমায় ফিরে আসার দাবি করেছেন। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের এক চ্যানেলে টেলিফোনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম অবশ্য জানিয়েছেন তাঁদের ক্ষমা চাইতে আপত্তি নেই।
এমনকি আওয়ামী লিগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এই একই বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে গত ২১ নভেম্বর। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, আওয়ামী লিগ নির্বাচনে অংশ নিতে সর্বতভাবে ঝাপাতে চায়। বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা নেমে এসেছে, তা মেটাতেও আওয়ামী লিগ আন্দোলনে নামবে বলে দাবি করেন বাহাউদ্দিন নাসিম। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আওয়ামী লিগের পূর্বতন সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যার অভিযোগ আদালতে বিচার সাপেক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লিগের মতো রাজনৈতিক দলকে আটকে রাখা কঠিন। কারণ এর ইতিহাস সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এখন দেখার বর্তমান দমবন্ধ করা পরিস্থিতি কাটিয়ে আওয়ামী লিগ এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি ফিরতে পারেন কবে।
Discussion about this post