রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখ নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এরপর ২৬ নভেম্বর তাঁকে চট্টগ্রাম জেলা আদালতে তোলা হলে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ১০ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। তারপর থেকেই প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজ। সংখ্যালঘুদের আন্দোলনের ওপর আঘাতও হানা হয়েছে বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। ইতিমধ্যেই সন্ন্যাসীর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এই পরিস্থিতিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল ইসকন। ভারত সরকারকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে তারা। ভিত্তিহীন অভিযোগ, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দিক বাংলাদেশ সরকার, দাবি ইসকন কর্তৃপক্ষের। জানা যাচ্ছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী চট্টগ্রাম কারাগারে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গেই রয়েছেন। বুধবার খেয়েছেন নিরামিষ। জেল থেকেই এ খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। আদালত চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে ডিভিশন প্রদানের নির্দেশ দিলেও কাগজপত্র না পাওয়ায় গতকাল পর্যন্ত তাকে ডিভিশন দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখা হলেও কোন ভবনে রয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সেই তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। রাত পৌনে ৯টায় সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ কারাগারে নিরাপদে আছেন। ভালোই আছেন। একটু আগে আমি তার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। তিনি সুস্থ রয়েছেন। ধর্ম মতে যেসব খাবার তিনি খান সেগুলো জেল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। যেহেতু বাইরের খাবার এখানে অ্যালাও না। তার সঙ্গে আইনজীবী বা ভক্তদের কেউ দেখা করেননি। দেখা করার জন্য কেউ আবেদনও করেননি।’ যদিও চিন্ময় কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে পাল্টা দাবি সে দেশের একাধিক হিন্দু সংগঠনের। এমনকি চট্টগ্রাম আদালতের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলে পাঠানোর পর থেকেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা। এমনকি বেশ কিছু সংগঠনও এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যা নিয়ে প্রবল চাপ তৈরি হয়। অবশেষে জেলের মধ্যে ইসকনের এই সন্ন্যাসী কেমন আছেন তা জানাল বাংলাদেশ প্রশাসন। চট্টগ্রাম আদালতের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় সেখানে পা রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলেও দাবি হিন্দু সংগঠনগুলি। অন্যদিকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা নাও হতে পারে সনাতনী জাগরণী জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। এক আইনজীবীর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় বাংলাদেশ। লাগাতার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আইনজীবীরা। বন্ধ আদালতের সমস্ত কাজকর্ম। এই অবস্থায় জামিন মামলার শুনানি নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় চিন্ময়সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(খ), ১২৪(ক), ১৫৩(ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় চিন্ময়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্তসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে ঢাকায় এসেছিলেন চিন্ময়। চট্টগ্রামে ফেরার পথে সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে তাকে তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার চিন্ময়কে আদালতে তোলা হয়। আদালতে জামিন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে সনাতন জাগণ মঞ্চের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে নগরীর আন্দরকিল্লার হাজারী গলিতে সহিংসতার এক ঘটনার সঙ্গে ইসকনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল। ইসকন সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়। গত ৮ নভেম্বর ঢাকার স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে এক সংবাদ সম্মেলন করে তা জানায় আন্তর্জাতিক সংগঠন ইসকনের বাংলাদেশ শাখা।কিন্তু তারপরও চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের নিন্দা জািনয়েছে ইসকনের মূল শাখা। এবিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপও চেয়েছে তারা। সোমবার তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে ইসকন চিনন্ময় কৃষ্ণ দাসকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন মহল থেকে ইসকন নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে সেই পোস্টে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসকনের যুক্ত থাকার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং অত্যন্ত আপত্তিজনক।
ওয়াকফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল সে দেশের অন্তবর্তী সরকার। যদিও ভারতের তরফে...
Read more
Discussion about this post