এরকম একটা দাবি আগেই উঠেছিল। এবার সেই দাবিকেই মান্যতা দিতে চলেছে মুহাম্মদ ইউনুসের তদারকি সরকার। সূত্রের খবর, নতুন নোট ছাপাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যাতে আর থাকবে না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নোটেই শেখ মুজিবের ছবি রয়েছে। কোনও কোনও নোটের দু পিঠেই রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। মূলত তাঁদেরই চাপে এবার বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক নোট থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।
জুন-জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থান হয় বাংলাদেশে। তাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। সেই সময় দাবি দাবি উঠেছিল “দাবি এক, দফা এক, হাসিনার পদত্যাগ”। তখনই বোঝা গিয়েছিল আন্দোলনের রূপরেখা। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই বাংলাদেশের জনগন গণভবনের দখল নেয়। অবাধে চলে লুটপাট, ভাঙচুর। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত মিউজিয়াম ভাঙচুর করে আগুন ধরানো হয়। বঙ্গবন্ধুর বিশাল বিশাল মূর্তি ভাঙা হয় পে-লোডার এনে। কার্যত বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলার কাজ চলছিল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সমস্ত স্মৃতি ও সৌধ। তখনই দাবি উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর ছবি দেওয়া ব্যাঙ্ক নোট বাতিল করে নতুন নোট ছাপানোর। কিন্তু আর্থিক কারণে সেই দাবি মানা হয়নি। এবার প্রবল চাপে নত হতে বাধ্য হলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস। সূত্রের খবর, ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে নতুন নোট ছাপাতে অর্থ মন্ত্রককে সবুজ সংকেত দিয়েছে।
নতুন নোটে শেখ মুজিবুরের ছবি আর থাকবে না। পরিবর্তে থাকবে জুলাই-অগাস্ট মাসে সংগঠিত গণ অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি এবং ধর্মীয় উপাসনাস্থলের ছবি। বাংলাদেশ সরকারের সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, নতুন নোট ছাপাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। বাংলাদেশে টাঁকশাল থাকলেও টাকা ছাপানোর প্লেট বিদেশ থেকে তৈরি করে আনতে হয়। পাশাপাশি নোট ছাপানোর পেপার, কালিও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে একেকটি ব্যাঙ্ক নোট ছাপাতে বেশি খরচ করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ককে। কিন্তু নাছোড় ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির দাবির কাছে অসহায় মুহাম্মদ ইউনুস। জানা যাচ্ছে, বাজারে থাকা নোট যথেষ্ট ভাল অবস্থায় থাকলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দাবি মেনে সেগুলি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে শেখ মুজিবুরের ছবি থাকায়। এমনিতেই চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ, এর ওপর নতুন নোট ছাপাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটির আর্থিক বোঝা চাপবে।
বাংলাদেশে এখন ১, ২, ৫, ১০, ২০, ১০০, ২০০ এবং ১০০০ টাকার নোট চালু আছে। এরমধ্যে এক টাকার নোট বাদে সবগুলিতেই জাতির পিতা শেখ মুজিবুরের ছবি আছে। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মুজিবরের “জাতির পিতা” স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার পক্ষপাতী। ফলে তাঁর ছবি দেওয়া ব্যাঙ্ক নোট বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে, বাজারে নতুন নোট আসার পর বর্তমানে চালু থাকা নোটগুলি তুলে নেওয়া হবে। বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, সমন্বায়ক এবং উপদেষ্টামন্ডলীর বেশিরভাগ সদস্যই আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে। কিন্তু বিএনপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আপত্তিতে তা করা যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলতে উদ্যোগী প্রায় সকলেই। যা নিয়ে গোটা বিশ্বেই নিন্দার ঝড় উঠেছে।
Discussion about this post