সীমিত সামরিক ক্ষমতা নিয়েও কেন বাংলাদেশের একটা অংশ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছে? এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে তাঁরা তুরস্ক থেকে সদ্য আমদানি করা বিশেষ ড্রোন মোতায়েন করে কোন বার্তা দিতে চাইছে বাংলাদেশ? এর পিছনে কি মুহাম্মদ ইউনুসের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে, নাকি তিনি কার্যত হাতের পুতুল? এই মুহূর্তে এই প্রশ্নগুলিই ঘুরপাক খাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে। সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। যা অতি ভয়াবহ। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রশাসনের উপর এই মুহূর্তে অন্তবর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ শুধু খাতায় কলমে। আদতে ইউনুস প্রশাসনের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে দুটি কট্টরপন্থী সংগঠন। যারা হল জামাত-এ-ইসলামি ও হরকত-উল-জিহাদ। পাশাপাশি তাঁদের মদতে গড়ে ওঠা কয়েকটি কট্টরপন্থী সংগঠন যেমন, হিজাব-উত-তাহরিত, আনসার-উল-বাংলা ও জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশও নিজের নিজেদের মতো করে প্রভাব বিস্তার করেছে। আর তাঁদের উস্কানিতেই এই যুদ্ধের জিগির তুলছে বাংলাদেশের একাংশ।
অক্ষয় কুমারের ‘হলিডে: আ সোলজার ইজ নেভার অফ ডিউটি’ সিনেমা অনেকেই দেখেছেন। সেখানেই জঙ্গি সংগঠনগুলির স্লিপার সেল সম্পর্কে বিস্তারিত দেখানো হয়েছে। সেটা ছিল সিনেমার গল্প। তবে এবার এই বাস্তবের স্লিপার সেল নিয়ে চিন্তায় ভারতবর্ষ। সম্প্রতি যে গোয়েন্দা রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে এসেছে, তাতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ যে স্লিপার সেলের সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে সেটাও রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ বাংলাদেশে কীভাবে সক্রিয় হয়ে উঠল নিষিদ্ধ সংগঠনগুলি? কতটা চিন্তা বাংলার? পুরো বিষয় নিয়ে বড় বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারী নিয়ে তাঁকে এর আগেও সরব হতে শোনা গিয়েছে। এবার তিনি শোনালেন আরও এক আশঙ্কার কথা। পশ্চিমবঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে তিনি যে কতটা উদ্বিগ্ন, সেটা বোঝা গেল তাঁর কথায়। অমিত শাহ বলেছেন, “সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্তের জন্য ব্যাপক বড় পরিকল্পনা আনছি আমরা। নিরাপত্তা বলয়ে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর সূচনার পরিণাম অত্যন্ত উৎসাহজনক ছিল। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে বদল আনারও প্রয়োজন রয়েছে। পুরো সংশোধন করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সীমান্তে কমপ্রিহেনসিভ ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পাইলট হিসাবে লাগু করা হবে অতি শীঘ্রই”।
ইন্ডিয়া টুডে ও নবভারত টাইমসের মতো সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাছে তুরস্ক নির্মিত ড্রোন মোতায়েন করেছে বাংলাদেশে। এমন খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি জোরদার করছে ভারত। গত রবিবার রাজস্থানের যোধপুরে বিএসএফের ৬০তম প্রতিষ্ঠা দিবসের কুচকাওয়াজে দেয়া এক ভাষণে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে তিনি বলেন, লেজার সজ্জিত অ্যান্টি-ড্রোন বন্দুক-মাউন্টেড সিস্টেম বসানো হচ্ছে। অমিত শাহর দাবি, আগামীদিনে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তে মনুষ্যবিহীন বিমান যানের “হুমকি” গুরুতর হতে চলেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও এই সিস্টেম তৈরি করেছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে। সরকারি তথ্য অনুসারে, পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত থেকে ২০২৩ সালে প্রায় ১১০টি ড্রোন সনাক্ত ও উদ্ধার করা হয়েছিল। চলতি বছরে সেই সংখ্যা ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়ে ২৬০টির বেশি ড্রোন নামানো বা উদ্ধার করা হয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অপরদিকে, বাংলাদেশের হাতে ইতিমধ্যেই তুরস্কের অত্যাধুনিক ড্রোন এসে গিয়েছে। যা ভারতের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চলতি বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ে বাংলাদেশের জেল ভেঙে ফেরার হয়েছিল প্রায় ৭০০ আসামি। এরমধ্যে প্রায় ৭০ জন শীর্ষ জঙ্গি রয়েছে। আবার ১৭৬ জন জঙ্গিকে মুক্তি দিয়েছে ইউনূস প্রশাসন। ভারতের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, , মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া সীমান্তে স্লিপার সেল ভীষণভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। গোটা বিষয়ে সমন্বয়কের ভূমিকায় রয়েছেন এক সময়ের জামাতে এ ইসলামি নেতা। আবার পাকিস্তানের আইএসআই পিছন থেকে মদত দিচ্ছে তাঁদের। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। ভারতের প্রতিটি গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর সংস্থা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে, পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফ, আইটিবিপি, অসম রাইফেলস, এনআইএ প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সংস্থা নজরদারি বাড়িয়েছে। এবার অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেমস কাজে লাগাতে উদ্যোগী হল ভারত।
Discussion about this post