একদিকে বাংলাদেশের মৌলবাদীরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জিগির তুলছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের মৌলবাদী নেতারা সেই আগুনে ঘি ঢালছেন। ফলে ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে চিন্তিত হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। মাত্র পাঁচ মাস আগেও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তার কারণ ছিল না। কিন্তু গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তদারকি সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতবিরোধী মনোভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যা এই পাঁচ মাসে চরম আকার নিয়েছে।
সোমবারই ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তাতে দু-দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তই তা বলে ঘৃণার আস্ফালন বন্ধ হয়নি বাংলাদেশের। ভারতবিরোধী স্লোগান, ভারতীয় জিনিস বয়কটের ডাক থেকে শুরু করে ভারতের একাধির রাজ্য দখল করে নেওয়ার হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উগ্র মৌলবাদীরা। সেই ঘৃণার আগুনে ঘৃতাহুতি দিতে শুরু করল পাকিস্তান। হ্যাঁ, হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের বন্ধু দেশ হতে চাইছে পাকিস্তান। আর বাংলাদেশও তাঁদের বুকে টেনে নিচ্ছে সাদরে। এই আবহেই পাকিস্তানের এক ধর্মগুরুকে বলতে শোনা গেল, ‘বাংলাদেশের ভাইদের বলছি, পাকিস্তানের পরমাণু বোমাও এখন তোমাদের। কেউ চোখ তুলে দেখলে চোখ উপড়ে নেব, হাত তুললে হাত ভেঙে দেব’ । (এই ভাইরাল ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ বর্তমান ২৪X৭)
হাসিনা বিদায়ের পর ইউনুসের বাংলাদেশে মৌলবাদী ধর্মান্ধদের যেন আস্ফালনের প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই এতে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন। একের পর এক ছাত্র নেতা ভারতকে কাঠগড়ায় তুলছেন। ভারতের বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে ভারত বিদ্বেষের বীজ বপন করছেন। যেমন, হাসিনা বিদায়ের পর ইউনুসের বাংলাদেশে ধর্মান্ধদের আস্ফালনের এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর এতে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই। যেমন সারজিস আলম বা আবু হাসনাত। তাঁদের বক্তৃতার একটা বড় অংশই থাকে ভারত বিদ্বেষ। আবু হাসনাত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত জঙ্গির তকমা দিয়ে ভারতকে জঙ্গির আশ্রয়দাতা বলে উল্লেখ করেছেন। এমনকি আরও এক কাঠি উপরে উঠে এই তরুণ ছাত্র নেতা ভারতকে হাউস অফ টেরর বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
আবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীও কম যাচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, গত ১৫ বছরে ভারত বাংলাদেশ থেকে শুধু সুবিধাই নিয়ে গেছে। তবে এখন আর তা দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, এই ধরণের ভারতবিরোধী মন্তব্য শুধুমাত্র নিজেদের অস্তিত্ব এবং নিজেদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখতেই করে চলেছেন বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিও। তাঁরা আবার ভারতের এলাকা দখলের হুমকি দিয়ে চলেছেন। বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রাহুল কবীর রিজভী দাবি করে বসেছেন, নবাবের আমলের বাংলা-বিহার-ওড়িশাকে আমরা দখল করবো। এখানেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের এক শ্রেণির ধর্মগুরু ও রাজনৈতিক নেতাদের আসল উদ্দেশ্য ঠিক কি। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন আসলে হাতের পুতুল, যা আড়াল থেকে চালনা করছে এই সমস্ত কট্টরপন্থী মৌলবাদীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও আদতে তাঁদেরই মস্তিস্ক প্রসুত। ফলে তাঁরাও মৌলবাদী ধর্মান্ধদের মতোই ভারতবিরোধী কথাবার্তা বলে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলছেন।
Discussion about this post