বাংলাদেশের ফেনী জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদী সে দেশের জন্য একটি গুরুতর দুর্বলতার কারণ। এ নদীটি বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি ফেনি নদী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবেও চিহ্নিত। সাম্প্রতিককালের বন্যা এই করিডোরের ভঙ্গুরতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাবও তুলে ধরেছে। কারণ ফেনী নদীর উত্তরে কুমিল্লা এবং দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলাকে যুক্ত করেছে। আর এই নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু উভয় অঞ্চলের পরিবহন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভুত সাহায্য করেছে। সড়ক ও রেলপথের জন্য এটি একটি অনিবার্য ট্রানজিট পয়েন্ট, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম বন্দর শহর এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করে। অন্য একটি কারণেও ফেনীর গুরুত্ব রয়েছে। এবং তাতে ভারতের স্বার্থ জড়িত।
২০২১ সালের ০ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে ফেনী নদীর উপর একটি সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন। যার নাম রাখা হয়েছে মৈত্রী সেতু, দুই দেশের বন্ধুত্বের নজির হিসেবেই এই নামকরণ। ভারত সরকার সম্পূর্ণ নিজের খরচে ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর নির্মান করেছে। যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সংযোগ অতি সহজ হয়েছে। আগেই বলেছি, ফেনী নদী আন্তর্জাতিক সীমান্ত। একদিকে ভারতের ত্রিপুরা, অন্যদিকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম। এই মৈত্রী সেতুর সাহায্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের দুরত্ব কমে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য অতি সহজেই ত্রিপুরা হয়ে ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে পৌঁছে যাচ্ছিল। তবে বর্তমান ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলতে থাকা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য এই বাণিজ্য কার্যত বন্ধ। কিন্তু চট্টগ্রামের জন্য এই ফেনী নদী এবং ফেনী সেতু অতি গুরুত্বপূর্ণ।
১ দশমিক ৯ কিলোমিটার এই সেতুর ভারতের সাব্রুম শহরকে বাংলাদেশের রামগড় শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই সেতু সাব্রুম শহরের থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুরত্ব ৮০ কিলোমিটারে কমিয়ে এনেছে। সেতু ও অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরিতে ভারত সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। ভারতের এই পরিমান টাকা খরচের একমাত্র উদ্দেশ্য অবশ্যই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে সরাসরি পণ্য সরবরাহ করা। এতে শিলিগুড়ি-গুয়াহাটি হয়ে ঘুরপথে সেভেন সিস্টার্সে পণ্য পাঠানোর খরচ অনেকটাই কমিয়ে ফেলা গিয়েছিল। যাতে সরাসরি লাভবান হচ্ছিল ভারত সরকার। তবে বাংলাদেশ সরকারও এই সেতুর মাধ্যমে বাণিজ্য হওয়ায় লাভের মুথ দেখছিল।
কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর এবং রাস্তা ব্যবহারের জন্য শুল্ক আদায় করে বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছিল বাংলাদেশ। এই ধরণের শুল্ক একটি নয়, অনেকগুলি খাত থেকে আদায় করতে পারছিল বাংলাদেশ। ফলে চট্টগ্রামের অর্থনীতি এতে অনেকটাই ফুলে ফেঁপে উঠছিল। পাশাপাশি ভারতের তৈরি সেতু ও রাস্তা ব্যবহার করে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন পণ্য সরবরাহ অনেকটাই সহজতর হয়ে গিয়েছিল। যেমন এই ফেনী নদীর সেতুর মাধ্যমেই চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা যুক্ত। এতদিন জলপথে পণ্য পরিবহন করতে হতো। চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া পণ্য বাংলাদেশের অন্য জেলাগুলিতে পাঠানোও অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে যদি কোনও কারণে এই ফেনীর উপর নির্মিত সেতু কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে চট্টগ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে ঢাকা বা বাংলাদেশের অন্য প্রান্তের থেকে।
Discussion about this post