চিত্র – এক বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গত চার দিনে দুটি মালগাড়ির মাধ্যমে মোট ৬৪৬ মেট্রিক টন আলু আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ভারতের পাঞ্জাব থেকে মালবাহী ট্রেনে বেনাপোল বন্দরে এই আলু এসে পৌঁছয়। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের বাজারে ভারতের আলু প্রতি কেজির মূল্য শুল্কসহ পড়বে ৩৯ টাকা।
চিত্র – দুই গত ২৫ দিনে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোট ৩ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন চাল গিয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে গত রবিবারই ১০০ মেট্রিক টন চাল গিয়েছে বাংলাদেশে।
চিত্র – তিন গত বুধবার মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, গণবিধ্বংসী অস্ত্র বিস্তার ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের জাতীয় উন্নয়ন কমপ্লেক্স এবং তিনটি ফার্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে আমেরিকা। এর ফলে প্রবল চাপে পড়েছে ভারতের পড়শি দেশটি।
চিত্র – চার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস দেখা করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সাহবাজ শরীফের সঙ্গে। কাকতালীয়ভাবে ওই দিনই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে করাচি থেকে আসা জাহাজ। নভেম্বরে এই জাহাজটিই দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম এসেছিল। চট্টগ্রামে খালাস হওয়া ৩৭০টি কন্টেনারের মধ্যে ২৯৭টি এসেছিল করাচি থেকে। জানা যাচ্ছে এবার প্রায় দ্বিগুন কন্টেনার এসেছে পাকিস্তান থেকে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে খবর, এ বার করাচি থেকে এসেছে ৬৯৯টি কন্টেনার।
এই খণ্ড চিত্রগুলি অনেক অব্যাক্ত কথা প্রকাশ করে। মুহাম্মদ ইউনুসের আমলে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব বাড়লেও যেমন সেই ভারত নির্ভরশীলতা রয়ে গেছে, তেমনই পাকিস্তানের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব জমিয়েছে বাংলাদেশ। যা আদৌ ভারত ভালো নজরে দেখবে কিনা সন্দেহ। এমনিতেই পাকিস্তান কার্যত অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ভয়ানক মুদ্রাস্ফীতির কবলে দেশটি। এমনকি ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থাও। গত মাসেই শিক্ষা ক্ষেত্রে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। এই অবস্থায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি-র কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু নতুন করে ঋণ দিতে অস্বীকার করে এই প্রতিষ্ঠানটি সাফ জানিয়ে দেয় প্রয়োজনে তাঁরা যেন ভারতের ‘উল্লাস’ বা ULLAS প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রসঙ্গত, অশিক্ষিত এবং আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্কদের সাহায্য করতে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ‘দ্য আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব লাইফলং লার্নিং ফর অল ইন সোসাইটি’ বা ‘উল্লাস’ প্রকল্প চালু করেছিল নরেন্দ্র মোদির ভারত সরকার।
অপরদিকে দেশের আর্থিক হাল ফেরাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে নতুন করে সাহায্য চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু তাঁরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যয় কমাতে পরামর্শ দেয়। এই শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না শাহবাজ সরকারের। এর ফলস্বরূপ পাকিস্তানে শুরু হয় ব্যাপক হারে ছাঁটাই। পাক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লক্ষের বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছে পাকিস্তানে। ফলে বেকারত্বের হার বেড়েছে। এক ধাক্কায় দেশে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। আগে থেকেই মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছিল পাকিস্তান, তাদের খাদ্য ও জলের প্রয়োজন ছিল। এখন তাদের উপার্জনও বন্ধ করা হয়েছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে পাকিস্তানে। এখানেই শেষ নয়, ব্যয় সংকোচের জন্য ছয়টি মন্ত্রকে তালাও ঝুলিয়েছে শাহবাজ শরীফ সরকার। পাশাপাশি দুটি মন্ত্রককে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতেও কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। আইএমএফের বেঁধে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তান কঠোরভাবে ব্যয় সংকোচের নীতি নেওয়ার পরই আইএমএফ ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। এরমধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের একটি কিস্তিও রিলিজ করা হয়েছে বলে দাবি পাক সংবাদমাধ্যমের।
পাকিস্তানের যা হাল, তাতে তাঁদেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা কিভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। জানা যাচ্ছে পাকিস্তান যে বাংলাদেশকে ২৫ হাজার টন চিনি পাঠিয়েছে সেটা আমদানি করা চিনি। পাকিস্তানের আমদানি ডেটা বলছে, দুবাই ও মালয়েশিয়া থেকে পাকিস্তান বিপুল পরিমান ভারতীয় সাদা চিনি আমদানি করে। এমনকি পিঁয়াজও আমদানি করতে হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু তাঁরাই বাড়তি দাম চাপিয়ে সেই চিনি ও পিঁয়াজ বাংলাদেশকে রফতানি করছে। যা নিয়ে বাংলাদেশের অন্দরেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে সেই পাকিস্তানের সঙ্গেই শিক্ষা ক্ষেত্রে গাঁটছড়া বাধঁতে চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট প্রস্তাব পাশ করেছে। ফলে বাংলাদেশি পড়ুয়ারা এবার ভারত, ইউরোপ বা আমেরিকার বদলে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়তে যাবে। এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য কি সেটাই এখন রহস্য।
বিগত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের ছাত্র নেতা, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কার্যত ভারতের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি সে দেশের প্রাক্তন আর্মি অফিসাররা ভারতের কয়েকটি অঞ্চল দখল নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। একইভাবে বিএনপি নেতারাও ভারতকে হুমকি দিতে ছাড়ছেন না। অপরদিকে বাংলাদেশের ইউনুস সরকার জেলবন্দি জঙ্গিদের মুক্তি দিয়েছে। ফলে তাঁরা এখন প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী কাজকর্ম পরিচালনা করে চলেছেন। এই অবহেই আল কায়দার শাখা সংগঠন, আনসারুল্লা বাংলা টিম উঠেপড়ে লেগেছে ভারতে নাশকতার ছক কষতে। বাংলাদেশে অস্থিরতার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও কেরল থেকে, আনসারুল্লা বাংলার ৮ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ। তাঁদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এঁদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়ে এসেছে। ধৃতদের মোবাইল ফোনে ছিল বিশেষ আপ। যার সাহায্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ১৫ জন হ্যান্ডলারের সঙ্গে এরা যোগাযোগ রাখত। এবং এই জঙ্গি সংগঠনের টার্গেট ছিল শিলিগুড়ির ‘চিকেনস নেক’! এই অবহে পাকিস্তানের করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজে কি আছে তা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। যাচ্ছে এবার প্রায় দ্বিগুন কন্টেনার এসেছে পাকিস্তান থেকে। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরে এই কন্টেনার খালাস করার সময় কোনও রকম যাচাই না করার নির্দেশ রয়েছে। ফলে আশঙ্কা এই কন্টেনারগুলির বেশরভাগেই রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ। যার সাহায্যে বাংলাদেশের জেহাদি সংগঠনগুলি ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতা ছড়ানোর কাজ চালাতে পারবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
Discussion about this post