জম্মু ও কাশ্মীরের একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁও। যার অদূরে অবস্থিত বৈসরণ ভ্যালি, যাকে মিনি সুইজারল্যান্ড বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা। ওই এলাকা বিগত দুই তিন বছর ধরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। ঘন পাইন বনে ঘেরা অদূরে বরফে ঢাকা সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি এবং উপত্যকায় সবুজের গালিচা পাতা ঘাসের মাঠ। কিন্তু জায়গাটি একটু নির্জন। ফলে নির্জনতা প্রিয় পর্যটকদের কাছে ওই বৈসরণ ভ্যালি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু গত মঙ্গলবার সেখানেই ঘটে গেল বিগত সময়ের নীরিখে এক ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলা। চার-পাঁচজন জিহাদি হাতে একে-৪৭ রাইফেল হাতে পাইনের জঙ্গল পার করে চলে আসে বৈসরণ ভ্যালিতে।
সেখানে তখন আনন্দ-ফূর্তিতে মত্ত প্রায় হাজার দুয়েক পর্যটক। কেউ গুজরাট থেকে এসেছেন, কেউ রাজস্থান থেকে, কেউ বাংলা থেকে আবার কেউ ওড়িশা থেকে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা যে ২৬-২৭ জনকে গুলি করে মারল, তাঁরা সকলেই হিন্দু। কারণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে জঙ্গিরা পর্যটকদের ধর্ম জেনে এবং নিশ্চিত হয়ে তবেই গুলি চালিয়েছে। সরকারি মতে প্রাণ গিয়েছে ২৬ জনের। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা ২৮। জানা যাচ্ছে দুজন বিদেশী নাগরিকও আছেন। সূত্রের খবর, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ, ভারতীয় সেনা, সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফ এবং জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ মিলিতভাবে একটি বৃহত্তর সার্চ অপারেশন শুরু করেছে পহেলগাঁও হামলাকারীদের ধরার জন্য। যার নাম দেওয়া হয়েছে “অপারেশন টিক্কা”। যদিও ভারতীয় সেনার চিনার কর্প সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে এই “অপারেশন টিক্কা” আসলে উচ্চস্তরের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান।
বুধবার সকালে ভারতীয় সেনার চিনার কর্প সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, অপারেশন টিক্কায় কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় একটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এবং উরি নালার সর্জীবন অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় দুই জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, ২-৩ জনের বেশি জঙ্গি উরি নালা হয়ে এলওসি অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় ছিল। সেই সময় যৌথবাহিনী তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দুই তরফেই গোলাগুলি চলে এবং সেখানেই দুই জঙ্গি মারা যায়। পরে চিনার কর্পস জানিয়েছে, জঙ্গিদের কাছ থেকে একে-৪৭ সহ প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, গোলাবারুদ, পাকিস্তানি মুদ্রা এবং অন্যান্য যুদ্ধের মতো জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান এখনও চলছে। অপরদিকে জম্মুর উধমপুরে জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়েই বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে অভিযানে যায় সেনা এবং পুলিশের যৌথবাহিনী।
তল্লাশি চালানোর সময় বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে জঙ্গিরা। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে এক জওয়ান আহত হন। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর। নিহত জওয়ানের নাম ঝন্টু আলি শেখ। তিনি ৬ প্যারা এসএফ-এ কর্মরত ছিলেন। ওই এলাকায় তল্লাসি অভিযান চালাচ্ছে ভারতীয় সেনার রোমিও ফোর্স। পরে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ট্যুইট করে জানান, উধমপুরে শহীদ হওয়া ঝন্টু আলি শেখ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তিনি ট্যুইয়ে লেখেন, ‘কাশ্মীরে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করতে করতে শহিদ হলেন নদিয়ার তেহট্ট ব্লকের পাথরঘাটার বীর বাঙালি সৈনিক ঝন্টু আলি শেখ। অমর রহে’। সূত্রের খবর, ভারত-পাকিস্তানের লাইন অফ কন্ট্রোল ধরে ভারতীয় সেনা ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথবাহিনী বড়সড় অভিযান চালাচ্ছে। সেনার একাধিক কর্পস এই অভিযানে সামিল করা হয়েছে। অপরদিকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাক সেনাও গোলাগুলি বর্ষণ করছে। যার জবাবও দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। ফলে এই মুহূর্তে লাইন অফ কন্ট্রোল জুড়ে হাই অ্যালার্ট চলছে।
Discussion about this post