চারদিনের ভারত-পাক সংঘাতে আচমকাই ব্রেক কষিয়ে দিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ট্যুইট। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাত ধরে আলোচনার পর, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি তিনি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দুই দেশকেই ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ হেন ট্যুইটের পর যখন গোটা ভারত হতবাক এবং সত্যি জানার চেষ্টা করছে, তখনই ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়ে দেয়, বিকেল পাঁচটা থেকে সংঘর্ষ বিরতি লাগু হয়েছে। এরপরই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করল? ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেন ঢুকতে দিল ভারত? ভারত ও পাকিস্তান যদি নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেন আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করলেন? প্রবল চাপের মুখেও এর পিছনে আসল রহস্য কি এখনও খোলসা করেনি নরেন্দ্র মোদির সরকার। যদিও ভারত সরকারের বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে একটা শব্দও খরচ করা হয়নি। বরং ভারতের বারংবার দাবি, পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন বা ডিজিএমও ফোন করে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেওয়ার পরই ভারত রাজি হয়। অর্থাৎ ভারত ঘুরিয়ে দাবি করে, অন্য কোনও দেশ নয়, ববং পাকিস্তানই নতজানু হয়ে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল। ফলে কে সত্য, কে মিথ্যা এটা এখনও অধরা।
যদিও সংঘর্ষ বিরতির পর গোটা পৃথিবীর মিডিয়াই এর উত্তর খুঁজতে লেগে যায়। প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করে। পরবর্তী সময় যেটা জানা যাচ্ছে, সেটা হল ভারতের আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে পাকিস্তান ভারতে পারমানবিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল। খবর আসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সরীফ ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডেকেছিল। যদিও তা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন পাক বিদেশমন্ত্রী। কিন্তু এরকম একটা খবর ছিল। পাশাপাশি পাকিস্তান ফতে-টু নামে একটি ব্যালেস্টিক ক্রুজ মিসাইল দিল্লিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়েছিল। যদিও সেই মিসাইল ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু পরে জানা যায়, সেটি ছিল ওপেন হেড ব্যালেস্টিক মিসাইল। অর্থাৎ, সেই মিসাইলের মাথার দিকে পারমানবিক অস্ত্র সেট করা যাবে। এমনও জানা গিয়েছিল, পাকিস্তান তাঁদের নিউক্লিয়ার বেড তৈরি করছে। অর্থাৎ যেখান থেকে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করা যায়। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি এই খবর পেয়েই হোয়াইট হাউজকে জানায়। এবং সেখানে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট দ্রুত ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সংঘর্ষ বিরতির জন্য ভারতকে রাজি করান। এখন এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চুপ করে গিয়েছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারতে যখন পহেলগাঁও হামলা হল এবং ভারত পাল্টা সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করল তখন ভারত সফরেই ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স। কিন্তু সে সময় তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এবার আসা যাক পাকিস্তানের পরমানু হাতিয়ার প্রয়োগের নীতি সম্পর্কে। তাতে স্পষ্ট বলা আছে মূলত চারটি কারণে পাকিস্তান পরমানু হামলা চালাবে। প্রথমত, পাকিস্তানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বৃহৎ পরিসরে সামরিক অনুপ্রবেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর পুরোপুরি আক্রান্ত হলে পাকিস্তান পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করবে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর একটা বৃহৎ অংশ সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস, বিশেষ করে যদি মনে করা হয় পাক বিমানবাহিনী পরাজয়ের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে তখনই পাকিস্তান পরমানু অস্ত্র ব্যবহার করবে। তৃতীয়ত, করাচি বন্দর অবরোধের ফলে যদি পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক শ্বাসরোধ এবং অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি হয় তাহলে এবং চতুর্থত, পাকিস্তানের ওপর পারমানবিক হামলা। উল্লেখযোগ্য দিক হল, এবার অপারেশন সিঁদূরে ভারত অন্তত দুটি শর্ত চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। প্রথমত, পাক বিমানবাহিনী এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ধ্বংস করেছে এবং সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে দিয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের ওপর সরাসরি হামলাও করে ভারত। তবুও কিন্তু তাঁরা পরমানু হামলা চালায়নি। বরং তার উদ্যোগ নেওয়ার পরই ভারত পাকিস্তানের পরমানু অস্ত্রভাণ্ডারের অন্তত দুটি জায়গায় চরম আঘাত হেনেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ভারত আর পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইল সহ্য করবে না। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের আর নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষমতাই নেই। আর এটা করতে গিয়ে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইজরাইলের মতো দেশের গোয়েন্দা সাহায্য পেয়েছিল। তাই পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্র যে আর ব্যবহারযোগ্য নয়, সেটা নিশ্চিত হয়েই ওয়াশিংটন থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতির কথা বলে ফেলেন।
Discussion about this post