বাংলাদেশে কি খেলা ঘুরতে চলেছে? এবার কি জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে শেখ হাসিনার দল ঘুরে দাঁড়াবে? আসলে যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে কি জাতিসংঘ তাদের অবস্থান বদল করেছে? তারা কি আওয়ামী লীগ দলের পক্ষে অবস্থান করছে? কারণ ১৬ই জুন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলের ৫৯ তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে জাতিসংঘের চেয়ারম্যান ভলকার তুর্ক আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধকরণের আইনের সংশোধন, সংগঠন ও মত প্রকাশ এবং স্বাধীনতাকে সীমিত করে। তবে তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের নাম নেননি। কিন্তু তার মুখে বিচার, নিষিদ্ধের কথা শুনে অনেকেই বলছেন, আসলে ভলকার তুর্ক শেখ হাসিনার দলের কথায় বলেছেন। কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এখন প্রশ্ন, তার বক্তব্যকে আদেও কি সরকার গুরুত্ব দেবে?
কারণ জুলাই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে জাতিসংঘ একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল।তাতে ১৪০০ মানুষের হত্যার কথা উল্লেখ ছিল। সেটিকে মানুষ বিশ্বাসও করেছে। সর্বপরি সরকার বিশ্বাস করেছে। এবং সেই রিপোর্টকে পুঁজি করে সরকার আওয়ামীলীগ নেতা, কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে রিপোর্টের শেষ অংশে এটাও উল্লেখ ছিল, যদিও জাতিসংঘ কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সেই মতের পক্ষে যায়নি। অন্যদিকে জাতিসংঘের চেয়ারম্যান ভলকার তুর্ক যে মন্তব্য করলেন, সেটা খানিকটা সরকারের বিরুদ্ধে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে কি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উপর চাপ তৈরি করছে জাতিসংঘ? যদিও গোটা বিশ্বে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সময় যে একের পর এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, বিশেষ করে ২০২৪ সালে নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ প্রবলভাবে সরব হয়েছিল। যাতে অবাধ, সুষ্ঠ ও ইনক্লুসিভ নির্বাচন হয়। কিন্তু মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বিষয় চোখে পড়ছে না। এটা নিয়েও বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বরং গত ৪ঠা জুন বাংলাদেশের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস মন্তব্য করেছিলেন, যে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে রাজনৈতিক দলের নয় বরং সমস্ত জনগণের অংশগ্রহণ। তার এই মন্তব্য কি ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। যখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন গোয়েন লুইস বলেছিলেন, দেশের পরিস্থিতির ওপর বিচার করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এটি তাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু জাতিসংঘের চেয়ারম্যান ভলকার বললেন, কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে তারা নয়। এমনকি করিডোর ইস্যুতেও বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই জানেন, জাতিসংঘকে সামনে রেখেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মানবিক করিডোর চেয়েছিল। কিন্তু এই গোয়েন লুইস বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে এরম কোনও কথা হয়নি। অর্থাৎ বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের বক্তব্য কি ঘিরে দোলাচল দেখা গিয়েছে।
এদিকে বাংলদেশে জাতিসংঘের হাইকমিশনার কার্যালয় খোলার বিষয়ে ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে সেটা দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন হবে। এটাকে অনেককে বিতর্কিত মন্তব্য বলে অভিহিত করছেন। এক্ষেত্রে সরকারকে চাপে রাখার কোনও বিষয় রয়েছে কিনা সেটাও ভাববার বিষয়। কারণ তাদের তরফে বলা হচ্ছে ইতিবাচকভাবে যে, লোকাল অফিস খোলাখুলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তারা দ্রুত বিচার করতে পারবে। কিন্তু যে যে দেশে জাতিসংঘের কার্যালয় রয়েছে, সেগুলি অন্য কথা বলছে। কারণ জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিস ঘিরে যথেষ্ট নেতিবাচক বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। কারণ শ্রীলঙ্কাতে একটি আঞ্চলিক অফিস খোলার জন্য দরবার করেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু তারা তা করতে দেয়নি। এমনকি ভারত সহ বেশ কিছু দেশের কাছেও তারা অফিস খোলার জন্য অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। কারণ এখনও পর্যন্ত জাতিসংঘ যে যে দেশের তাদের অফিস খুলতে পেরেছে, সেই সমস্ত দেশ সংকটের মধ্যে রয়েছে। এদিকে মানবিক করিডোর বিষয়টি নিয়েও চিন্তা তৈরি করেছে বাংলাদেশের অন্দরে। কারণ এত সহজে জাতিসংঘ এই বিষয়টি থেকে সরে আসবে না, সেটা বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, কিভাবে সামাল দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা আদেও দিতে পারে কিনা।
Discussion about this post