চিত্র ১
হাওড়া ময়দানে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় ঘেমে-নেয়ে অস্থির ঝাত্রীরা। কিন্তু বাস ড্রাইভারের সময় হলে তবেই বাস ছাড়বে।
চিত্র ২
বাস ছেড়ে হেলেদুলে পৌঁছলো হাওড়া স্টেশন চত্বরে। এবারও অপেক্ষা, যাত্রী টানতে বাস থেকে নেমে গিয়েছেন কনডাক্টর। বাসে বসে অধীর আগ্রহে যাত্রীরা।
চিত্র ৩
বাস যদিও বা ছাড়ল, হাওড়া ব্রিজের জ্যামে আটকে সময়ের দফারফা। দেখা গেল হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড বা বিবাদী বাগ পৌঁছতেই ঘন্টা দেড়েক সময় গায়েব।
চিত্র ৪
বাস ধীরে চলা নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ। ড্রাইভারের সঙ্গে তর্কাতর্কি। যা প্রায়ই হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
উপরের এই চিত্রগুলি একসময় হামেশাই দেখা যেত হাওড়া থেকে এসপ্লেনেড বা শিয়ালদা আসার বাসে। কিন্তু এখন এটা অতীত। কারণ হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে এসপ্লেনেড পর্যন্ত। ফলে মেট্রোয় চড়ে গঙ্গার তলদেশ দিয়ে হুস করে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে একদম বিনা বাধায়। সময় লাগছে মাত্র ১৫ মিনিট। ফলে উপরের চিত্রগুলি পাল্টে এখন অফিস টাইমে তিল ধরানোর জায়গা থাকছে না মেট্রোগুলিতে। তবে ভিড় হলেও যাত্রীরা খুব খুশি।
একটা হিসাব বলছে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লেনেড পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ায় বাসের যাত্রী কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। ফলে প্রমোদ গুনছেন বাস মালিকরা। চরম আসঙ্কায় কয়েক হাজার বাস ড্রাইভার এবং কনডাক্টর এবং তাঁদের পরিবার। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাস বসে গিয়েছে, কাজ হারিয়েছেন কয়েকশো মানুষ।
গঙ্গাতল দিয়ে মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার পর প্রথমদিকে ভিড় থাকতো সাধারণ যাত্রীদের। মূলত গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে মেট্রো সফরের থ্রিলিং। দ্বিতীয়ত সেলফি তোলা বা রিলস বানানোর হিড়িক। তবে সময়ের সঙ্গে এবং আরপিএফের কড়াকড়িতে এখন তা বন্ধ। ফলে অফিস টাইমে বাড়ছে ভিড়। এসপ্লেনেড, ও মহাকরণ স্টেশনে নামার যাত্রীরা ভরসা করছেন মেট্রোয়। মাত্র ১২ থেকে ১৩ মিনিটের সময়ে দশ টাকা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন অফিসযাত্রীরা। অন্যদিকে বাসের ভাড়া ১০-১২ টাকা হলেও একই পথে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা, জ্যাম থাকলে আরও বেশি। ফলে অফিস টাইমে হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলাগামী মেট্রোয় ভিড়ের চাপে দরজা বন্ধ করতে সমস্যা হচ্ছে। যাত্রীদের দাবি, এই ১৫ মিনিট এসি-তে কাটালে ক্লান্তিও কেটে যায়।
এই অবহে হাওড়া ময়দান থেকে রুবি, সায়েন্স সিটি, পার্ক স্ট্রিটগামী বাসের অবস্থা কাহিল। ৫০ শতাংশ যাত্রীও হচ্ছে না। একইভাবে হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহের সরকারি বাসেও যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। আবার হাওড়া থেকে উল্টোডাঙ্গা, বাগুইহাটি, এয়ারপোর্ট রুটেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে যাত্রীসংখ্যা। বাস মালিকদের আশঙ্কা, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লেনেড থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত অংশটি জুড়ে গেলে পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হবে। তখন যাত্রী পাওয়া আরও দুস্কর হয়েছে পড়বে বলেই মনে করছেন বাস মালিকদের একাংশ।
অপরদিকে হলুদ ট্যাক্সি এবং আপ ক্যাবের অবস্থাও এক। যাত্রী নেই তাঁদেরও। ওলা, উবরের মতো সংস্থা শিয়ালদা, এসপ্লেনেড, পার্কস্ট্রিট, মানিকতলা অঞ্চল থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত ক্যাবের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু হাওড়া থেকে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে যাওয়া যাত্রীদের একাংশ মেট্রো ধরছেন। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে অল্প লটবহর থাকছে। ফলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লেনেড থেকে মহাকরণ হয়ে হাওড়া পর্যন্ত পরিষেবা চালু হতেই মাথায় হাত বাস, ট্যাক্সি এবং ক্যাব মালিকদের। আগামীদিনে শিয়ালদা এবং এসপ্লেনেড অংশটি জুড়ে গেলে হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত সম্পূর্ণ পরিষেবা চালু হয়ে যাবে। এরপর এই সমস্ত রুটের বাসগুলি কতটা যাত্রী পাবে সেটা নিয়ে এখন থেকেই আতঙ্কে বাসমালিকরা। আর সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে বাস ড্রাইভার এবং কনডাক্টরদের পরিবার।
Discussion about this post