বাঙালি নাকি রাজনীতির ময়দানে যতটা এগিয়ে, খেলাধুলার ময়দানে ততটাই পিছিয়ে। এটাই কার্যত মিথে পরিনত হয়েছে। তবে একটা সময় ছিল, খেলাধুলার জগতে বাংলার নাম প্রথম সারিতেই থাকতো। বিশেষ করে ফুটবলে। বাঙালির ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা এতটাই যে, ফুটবল সম্রাট পেলে একসময় কলকাতায় খেলে গিয়েছেন তাঁর বিখ্যাত কসমস ক্লাবের হয়ে। কিংবদন্তি জার্মান অধিনায়ক অলিবার কান কলকাতায় তাঁর শেষ ম্যাচ খেলেছেন। কলকাতার তিন প্রধান, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিং তো শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব। অপরদিকে, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো তারকা ক্রিকেটার দীর্ঘদিন ভারত অধিনায়ক ছিলেন। কলকাতার ইডেন আজও ক্রিকেটের নন্দনকানন বলা হয়, যেখানে টেস্ট ম্যাচেও প্রায় লক্ষ দর্শকের ভীড় হতো। তবুও বিগত কয়েক দশক ফুটবল বা ক্রিকেটে অনেকটা ভাঁটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তবে বাঙালির সেই আক্ষেপ সুদে আসলে মিটিয়ে দিল ২০২৩-২৪ মরশুম। আইএসএল শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, সুপার কাপ, আই লিগ এবং আইপিএল! দেশের প্রায় সব বড় ট্রফিই এবার কলকাতা তথা বাংলায় এল।
এবার ফুটবল মরশুম শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ডুরান্ড কাপ দিয়ে। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন ডুরান্ড কাপকে এবার আলাদা মর্যাদা দেওয়ায় দেশের সমস্ত বড় ক্লাব খেলেছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ডুরান্ড কাপ ফাইনালে উঠেছিল বাংলার দুই যুযুধান ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এফসি এবং মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট। হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়ের পর ওই ম্যাচে জেতে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, একমাত্র গোলদাতা পেত্রাতোস। যদিও সর্বাধিক ডুরান্ড কাপ জেতার রেকর্ড রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের দখলে। কিন্তু দীর্ঘ ট্রফির আকালের পরও এই মরশুমে ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় লাল-হলুদ বাহিনীকে। তবে ডূরান্ড কাপ কলকাতাতেই থেকে গেল মোহনবাগানের সৌজন্যে।
ইস্টবেঙ্গলের ট্রফির আকাল মিটতে যদিও বেশিদিন সময় লাগেনি। চলতি মরশুমের সুপার কাপের শিরোপা দখল করে লাল-হলুদ বাহিনী। ভারতের দুটি বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট আইএসএল এবং আইলিগের শীর্ষ সারির দলগুলিকে নিয়ে এই নকআউট প্রতিযোগীতা হয়। তারকা কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতের নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা অদম্য জেদ এবং মানসিকতা নিয়ে সুপার কাপ জিতে দীর্ঘ ১২ বছরের ট্রফির খরা কাটিয়ে দেয় লাল-হলুদ সমর্থকদের। ফলে সুপার কাপও কলকাতায় আসে।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আইএসএল চালু করার পর এবার একটা ট্রফি যোগ করেছে। সেটি হল আইএসএল লিগ শিল্ড। আইএসএলের প্লে অফের দৌঁড়ে যে ক্লাবের পয়েন্ট সর্বোচ্চ থাকে, অর্থাৎ লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকে সেই দলকে দেওয়া হয় লিগ শিল্ডের খেতাব। ২০২৩-২৪ মরশুমের আইএসএলে লিগ শিল্ড খেতাব দখল করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। যদিও তাঁরা আইএসএল খেতাবি লড়াইয়ে মুম্বই এফসির কাছে পরাস্ত হয়েছে। তবুও লিগ শিল্ড জিতে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে।
আইএসএলের পর ভারতীয় ফুটবলের দ্বিতীয় বড় টুর্নামেন্ট হল আইলিগ। এই টুর্নামেন্টে দেশের দ্বিতীয় সারির দলগুলি খেলে। আইলিগ চ্যাম্পিয়ন দল আইএলএলে উত্তীর্ণ হয়। সদ্য শেষ হওয়া মরশুমে আই লিগ ট্রফিও এল কলকাতায়। চ্যাম্পিয়ন হল কলকাতারা তৃতীয় প্রধান ক্লাব মহমেডান স্পোর্টিং। ফলে পরের মরশুমে কলকাতার তিন প্রধানই আইএসএব খেলবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, আই লিগ ট্রফিও এবার কলকাতায় আসা।
ফুটবলের পর চলতি মরশুমে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রবিবার যখন কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল দাপট দেখাচ্ছে, তখনই সুদূর চেন্নাইয়ের মাঠে দাপট দেখাল কেকেআর ক্রিকেটাররা। বিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ক্রিকেটারদের সব বিভাগেই পরাস্ত করে হেলায় জিতে নিল আইপিএল শিরোপা। ফলে আই লিগ, আইএসএল লিগ শিল্ড, সুপার কাপ এবং ডুরান্ড কাপের পর আইপিএল ট্রফিও বাংলা তথা কলকাতায় এল।
Discussion about this post