একজন ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে রাহুল দ্রাবিড় কোনদিন বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেননি। কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার কোচ হিসেবে পারলেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে ঝুলিতে প্রায় ২৪ হাজার রান। তবুও প্রথম জীবনে সচিন তেন্ডুলকারএবং সৌরভ গাঙ্গুলী ও পরবর্তীতে মহেন্দ্র সিং ধোনি নামক মহীরুহের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেছেন রাহুল দ্রাবিড় নামক গুল্মলতা। যিনি ভারতের ২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম প্রধান কারিগড়। রাহুল দ্রাবিড় শচীনের মধ্যে ক্রিকেটের ফার্স্টবয় নয়, সৌরভ গাঙ্গুলীর মত এগ্রেশন বা ক্রিকেটীয় দূরদর্শিতা তার কোনদিনই ছিল না। যুবরাজ ধোনির মতো ফ্লামবয়েন্টও নন। দ্রাবিড় হলএকটা অভ্যেস, একটা প্রচন্ড জেদ। যখন প্রচন্ড ঝড়ে সমস্ত মহীরুহ ভেঙ্গে পড়ে তখন ঝড়ে শেষে লতাপতার মত দাঁড়িয়ে থাকেন রাহুল দ্রাবিড়।
তাঁর জেদ তাঁর অধ্যাবসায় তাঁকে সমস্ত ক্রিকেটারদের থেকে আলাদা করেছে। দ্য ওয়াল অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট। ২০০১ সালে ইডেন টেস্টে ভিভিএস লক্ষনকে নিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিজয় রথ । ৩৫৩ বলে ১৮০ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন। ভারতের হয়ে ১৩৪ টা টেস্ট রাহুল জাবিরের রয়েছে ৩৬ টা সেঞ্চুরি এবং ৫টা ডাবল সেঞ্চুরি। তবুও কেউ রাহুল দ্রাবিড় হতে চায় না ।আসলে রাহুল দ্রাবিড়ের ক্লাস রয়েছে কিন্তু গ্ল্যামার নেই। কখনোই কোনো উচ্ছ্বাস নেই, ম্যাচ জেতার পর হেলমেট হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে সাজঘরে ফিরেছেন। নীরবে প্রস্তুতি নিয়েছেন পরবর্তী যুদ্ধের জন্য। তার যা কিছু কেরামতি ২২ বছরের মধ্যে। ২২ গজের বাইরে তার কোন দেখনদারি নেই। ২৩ শে মার্চ ২০০৩, ২০ বছর পরে সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল রাহুল দ্রাবিররা। সেবার অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্ল্ড কাপ জিতল ।এরপর ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে গেলেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন হিসেবে।
গ্রুপ পর্যায়ে থেকেই সেবার ফিরতে হলো খালি হাতে। একটা বর্ডার গাভাস্কার ট্রফি কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জেতার জন্য কেউ রাহুল দ্রাবিড়কে মনে রাখবে না। তবে রাহুল আমি কেমন রেখেছে ব্রেট লি, ওয়াসিম আক্রম, শ্যেন ওয়ার্ন, মুরলীধরন , শ্যন পোলক, শোয়েব আখতারের মত কিংবদন্তি বোলাররা। একমাত্র তারাই জানেন ভারতীয় দলের সমস্ত রথী মহারথীরা যখন পরাস্ত হয়ে যান তখন মাথা তুলে দাঁড়ায় একটা ছোট্ট গুল্মলতা। সেই গুল্ম অতই হলো রাহুল দাবির যে একটা অভ্যাস the great wall of indian cricket। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের ২০ তারিখে ভারতের প্রথম ব্যাট করতে নেমেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে করেছিলেন ৯৫ রান । কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুল নামক আরেক ভারতীয় সেঞ্চুরি করে সমস্ত লাইন লাইট ছিনিয়ে নিয়েছিলেন । ২১ বছর পর ২০২৪ সালের ২৯ শে জুন সমস্ত ভাই-ব্রাইট ফিরিয়ে দিল রাহুল দ্রাবিড় কে। বিশ্বকাপটা হাতে নিয়ে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছাসে ফেটে পড়লেন । এই প্রথমবার এবং হয়তো শেষবারের মতো।
Discussion about this post