এও এক বিশ্বরেকর্ড। গ্ৰুপ পর্যায়ের তিনটি ম্যাচ এবং শেষ ষোলো ও শেষ আটের দুটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এবারের ইউরোতে ফরাসি ফুটবলাররা একটি গোলও সরাসরি বিপক্ষের জালে পাঠাতে পারেনি। ইউরোর মতো হাই প্রোফাইল টুর্নামেন্টে এটি একটি বিরল নজির। বলা ভালো, এক অন্য ধরণের রেকর্ড গড়ল ফ্রান্স।
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। পরের ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছিল ফ্রান্স। ফলে ২০২৪ ইউরো কাপে অন্যতম ফেভারিট দেশ হিসেবে জার্মানিতে এসেছিল এমবাপে, ডেমবেলেরা। প্রত্যাশামতোই সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অসম্ভব গোল খরায় ভুগছে ফরাসি স্ট্রাইকাররা। এখনও পর্যন্ত গোটা টুর্নামেন্টে সরাসরি কোনও গোল করতে পারেনি তাঁরা। তবে, খুব বেশি গোলও খায়নি ফ্রান্স। একটিমাত্র গোল হজম করেছে তাঁরা।
এবারের ইউরোয় সবচেয়ে কঠিন গ্রূপে পড়েছিল ফ্রান্স। তাঁদের গ্রূপে ছিল রবার্ট লেওয়ানডস্কির পোল্যান্ড, ডিপাইয়ের নেদারল্যান্ড এবং র্যালফ র্যাংনিকের কোচিংয়ে থাকা শক্তিশালী অস্ট্রিয়া। মজার ব্যাপার, একমাত্র পোল্যান্ড ছাড়া এই গ্রূপের বাকি তিনটি দেশই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। এবং ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস খেলছে সেমিফাইনালে। এই কঠিন গ্রূপে ফরাসি ফুটবলররা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলতে পারেনি, তবুও সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে।
গ্রূপের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্স ১-০ গোলে হারিয়েছিল অস্ট্রিয়াকে। অস্ট্রিয়ান ফুটবলার সেমসাইড গোল করেন ওই ম্যাচে। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে গোলশূন্য শেষ করে ফরাসিরা। শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ১-১ ড্র হয়। দুটি গোলই পেনাল্টিতে হয়েছিল। ফ্রান্সের হয়ে পেনাল্টিতে গোল করেন এমবাপে এবং পোল্যান্ডের হয়ে লেওয়ানডস্কি গোল করেন। ইউরোর শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স। সেখানেও তাঁরা জিতিয়েছে সেমসাইড গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে রোনাল্ডোর পর্তুগাল মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্সের। সেই ম্যাচও গোলশূন্য শেষ হয় এবং ট্রাইব্রেকারে জেতে ফ্রান্স। অর্থাৎ গোটা টুর্নামেন্টে একটিও ফিল্ড গোল নেই ফ্রান্সের।
এবারের ইউরো কাপে একেবারেই ছন্দে নেই গ্রিজমান। এমবাপে আবার নাকের ব্যথায় জেরবার। ওসমান দেম্বেলে কি উদ্দেশ্যে মাঠে নেমেছেন সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। তবে মাঝমাঠে অসাধারণ ফুটবল খেলছেন এনগোলো কন্তে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন জুল কৌন্দে। ফলে ম্যাচের রাশ বরাবরই ফ্রান্সের হাতে থাকছে। কিন্তু গ্রিজম্যান, এমবাপে বা দেম্বলে কেউই বিপক্ষের বক্সের ভিতর খিপ্রতা দেখাতে পারছেন না। ফলে পেনাল্টি বাদে একটিও গোল করতে পারেনি ফরাসি ফুটবলাররা।
সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি স্পেন। যারা আবার এই ইউরো কাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে। এবারের ইউরোয় স্প্যানিশ ফুটবলাররা মোট ১১টি গোল করেছেন। গ্রুপ পর্বেই করেছে পাঁচ গোল, শেষ ষোলোয় জর্জিয়াকে চার গোল মেরেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে আয়োজক দেশ জার্মানিকেও দুই গোল দিয়েছে। ফলে এবার ফ্রান্সের সামনে সবচেয়ে কঠিন লড়াই। ফরাসি কোচ দেশোঁ জানেন, আসল বিপদটা এইবার সামনে আসছে। তাই কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই তিনি বলেছেন, টুর্নামেন্ট জিততে গেলে গোল করতে হয়। যেটা আমরা করতে পারছি না। অপরদিকে গাদা গাদা গোল করেও ছিটকে গিয়েছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া। সেই দিক থেকে একটিও গোল না করে সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। ফলে এবার অন্য খেলা দেখাতেই পারে এমবাপে, গ্রিজম্যানরা। সেই আশাতেই মঙ্গলবার রাত জাগবে ফুটবলপ্রেমী বিশ্ব।
Discussion about this post