লোকাল ট্রেন হোক বা দূরপাল্লার ট্রেন। গোটা ট্রেন পরিচালনা করেন ট্রেন ম্যানেজার বা গার্ড। তাঁর নির্দেশেই ট্রেন চালান চালক। কিন্তু ট্রেন চালক ও গার্ডদের বিশ্রাম না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। সম্প্রতি লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিও রেলের গার্ড এবং চালকদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছিলেন। পরে রাহুল জানান, ভারতীয় রেলের গার্ড এবং চালকরা পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ এবং বিশ্রাম পাচ্ছেন না। এমনকি কর্মক্ষেত্রে রেলের রানিং রুম বা বিশ্রামকক্ষের হালও খুব খারাপ বলে অভিযোগ করেন রাহুল গান্ধি। পরে রাহুলের এই অভিযোগ নশ্যাৎ করে রেল মন্ত্রক। বরং রেলের রানিং রুমগুলির ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ করে রেল দাবি করে, তাঁরা ট্রেনচালক এবং গার্ডদের জন্য অত্যাধুনিক বিশ্রাম কক্ষ তৈরি করেছে। প্রত্যেকটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এবং আধুনিক কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব রেলের হাওড়া এবং শিয়ালদা ডিভিশনে চালক এবং গার্ডদের জন্য রয়েছে কয়েকটি রানিং রুম। যাকে রেলকর্মীরা চলতি ভাষায় ক্রু লবি বলে থাকেন। এখানে লোকাল, দূরপাল্লার ট্রেন এবং মালগাড়ির চালক এবং গার্ডরা ডিউটির ফাঁকে বিশ্রাম নেন। শিয়ালদা ডিভিশনে শিয়ালদা স্টেশন, কলকাতা স্টেশন, দমদম স্টেশন, নৈহাটি স্টেশন, রানাঘাট স্টেশন এবং বারাসত ও বনগাঁ স্টেশনে রানিং রুম রয়েছে। রেলের দাবি, এই রানিং রুমগুলি এতটাই আধুনিক যে এক ঝলকে দেখলে যে কেউ ফাইভস্টার হোটেল ভেবে ভুল করবেন। এই ক্রু লবিগুলি যেমন শীততার নিয়ন্ত্রিত, তেমনই মাইক্রোওয়েভ, ইলেকট্রিক ওভেন, রেফ্রিজেরেটর-সহ রান্না করার পুরো ব্যবস্থা। আমিষ এবং নিরামিষ আলাদা রান্নাঘর থাকে কোনও কোনও রানিং রুমে। প্রতিটি রানিং রুমে সংযুক্ত শৌচালয়-সহ দুটি করে বেড দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আগে ডর্মেটরি স্টাইলের ঢালাও বে়ড থাকতো রানিং রুমে। এখন রানিং রুমে আলাদা আলাদা করে রুম থাকে, তাও আবার সাউন্ডপ্রুফ। যাবে বাইরের আওয়াজ ঢুকে গার্ড বা চালকদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। এছাড়া থাকে ধ্যান এবং যোগ ব্যায়াম করার জন্য আলাদা ঘর। পাশাপাশি রয়েছে রিডিং রুম এবং বডি ম্যাসাজের দুর্দান্ত ব্যবস্থা। ট্রেডমিল, অটোমেটিক সাইকেল-সহ অত্যাধুনিক জিম। যাতে গার্ড এবং ট্রেন চালকরা কাজে যোগ দেওয়ার আগে শরীর এবং মন দুটোই তরতাজা করতে পাবেন।
ভারতীয় রেলে ট্রেন চালকদের দুটি পদ রয়েছে। একটি লোকো পাইলট অন্যটি অ্যাসিস্টেন্ট লোকো পাইলট। আর লোকাল ট্রেনের চালকদের বলা হয় মোটরম্যান। অনেক সময়ই দেখা যায়, লোকো পাইলট বা অ্যাসিস্টেন্ট লোকো পাইলট এবং গার্ডদের গভীর রাতে ডিউটি শেষ হয়। তখন তাঁরা ওই স্টেশনের রানিং রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। যাতে একজন চালক বা গার্ড দীর্ঘ কাজের পর একটু ভালোভাবে ঘুম এবং বিশ্রামের সুযোগ পান তার জন্যই রেল আধুনিকমানের রানিং রুম তৈরি করেছে বিভিন্ন বড় বড় স্টেশনে। প্রতিটি রানিং রুমেই উল্লেখ্য, গত বছর ওড়িশার বালাসোরে এবং চলতি বছরে উত্তরবঙ্গের ফাঁসিদেওয়ার কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দূর্ঘটনার পর রেলের রানিং রুমের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এমনকি বিশেষ নজরদারিও চালানো হচ্ছে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। শিয়ালদা স্টেশনের মেন শাখার উপরে তিনতলায় এমনই এক ঝাঁ চকচকে রানিং রুম রয়েছে। যা অনেকেই জানেন না। এতদিন এই রানিং রুমটি ছিল অতি সাধারণ।
তবে সম্প্রতি সেটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এবং ফাইভস্টার হোটেলের মতোই গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রয়েছে মোট আটটি করে বিশ্রাম কক্ষ। তাতে দুজন করে থাকতে পারবেন। মোট ১৬ জন পুরুষ চালক এবং ৮ জন মহিলা চালকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে শিয়ালদায়। তৈরি করা হয়েছে নতুন রিডিং রুম এবং অত্যাধুনিক কিচেন। পাশাপাশি রাখা হয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা যন্ত্র এবং প্রেথ অ্যানালাইজার মেশিন। যেখানে ফুঁ দিয়ে চালকদের প্রমান দিতে হয় যে তাঁরা মদ্যপান করেননি। সবমিলিয়ে রেলের চালক এবং গার্ডদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মন চাঙ্গা করার দিকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post