গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ শিরোনামে আড়িয়াদহের ত্রাস জয়ন্ত সিং। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। দুধবিক্রেতা থেকে আড়িয়াদহের ‘ডন’। সরকারি জমি দখল করে বিলাসবহুল বাড়ি। কীভাবে রাতারাতি বদলেছিল জয়ন্তর জীবন? আড়িয়াদহ মৌসুমী মোড় থেকে কিছুটা এগোলেই প্রতাপ রুদ্র লেন। সেই গলির ভিতরেই মাত্র এক বছরের মধ্যে অট্টালিকা বানাল কী করে জয়ন্ত? প্রশ্ন ছিল সকলেরই। কিন্তু সাহস করে সেই প্রশ্ন করার সুযোগ পায়নি কেউ। প্রাণে মরার ভয় আছে তো নাকি! তাই চুপ করেই থাকতেন সকলে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বিশাল পুকুর ঘেঁষা জমিটি দীর্ঘ সময় ধরে পরিত্যক্ত। এলাকার বাচ্চারা মাঝেমধ্যে খেলা করত সেখানে। অভিযোগ, সেই জমি রাতারাতি নিজের কব্জায় করে নেয় আড়িয়াদহের ‘ত্রাস’ জয়ন্ত। এদিকে নতুন সেই বিশাল বাড়ি, তা নাকি হয়েছে সরকারি জমির উপর।
বাড়ির বাইরে তালা দেওয়া। লোকজনের কথা বলার আওয়াজ আসছে। ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যাবে ভিতরে দামি গাড়ি। আর বাড়ি টির এক ধারে পুকুরের একটা অংশ বস্তা ভর্তি বালি-পাথরের টুকরো ফেলে বোজানো হয়েছে। ওই গলি থেকে বেরিয়ে প্রধান রাস্তা ধরে কয়েক পা এগোলেই বাঁ হাতের গলিতে জয়ন্তের পুরনো বাড়ি। সংলগ্ন বিশাল খাটাল। জনবসতির মধ্যে খাটাল চলছে কী ভাবে? আর, পরিত্যক্ত জমি বা কী ভাবে দখল করল বছর পঁয়ত্রিশের ‘জায়ান্ট’? বেলঘরিয়া, দক্ষিণেশ্বর থানা মিলিয়ে যার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, হুমকি, মারধর, খুনের চেষ্টার অন্তত ৬-৭টি পুরনো মামলা রয়েছে।শোনা যাচ্ছে, জয়ন্তর এই প্রভাব-প্রতিপত্তির নেপথ্যে এক প্রোমোটার। তাঁর হাত ধরেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জয়ন্ত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকা কার্যত নিজের দখলে করে নেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, “রাজনৈতিক মদতে জয়ন্ত এতটাই ভয়ডরহীন যে, নিজেই বলে বেড়াত ও-ই আইন-আদালত। ওর উপরে কেউ নেই।” জয়ন্ত প্রথমে দুধ বিক্রি করতো। পরবর্তীতে ইমারত তৈরির সামগ্রী সরবরাহ করতে শুরু করে। তারপর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসে ইমারত তৈরির সামগ্রীর সিন্ডিকেট করতে শুরু করে জয়ন্ত। কোন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায়? কিভাবে সরকারি জমি দখল করে এক বছরের মধ্যে রাতারাতি ইমারত তৈরি করে নিল জয়ন্ত? স্থানীয় নেতারা কি কিছুই জানতেন না? জানা গিয়েছে, এলাকায় কেউ জমি কিনলেও মোটা টাকা দিতেই হত জয়ন্তকে। আইন-আদালত কোনও কিছুরই পরোয়া করতেন না তিনি। ফলে নিজের মতো করে সাম্রাজ্য তৈরি করছিলেন। বিহার থেকে ছেলেদের নিয়ে আসতেন কাজে লাগানোর জন্য।
কিন্তু জয়ন্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার দুঃসাহস দেখানোর ক্ষমতা ছিল না এলাকার কারও। এমনকী মতবিরোধ হলে জয়ন্তর হাত থেকে বাঁচতেন না তাঁর দলের লোকরাও। শাসকদলের একাংশের দাবি, মদন মিত্রের আশেপাশে দেখা যেত জয়ন্তকে। যদিও এ বিষয়ে কামারহাটির বিধায়ক বলেন, “আমি কামারহাটির সব কিছুর সভাপতি। তবে জয়ন্তর সঙ্গে কোনও যোগ নেই। ওরা কেউ শাসকদলের ছায়ায় ছিল না। এ বিষয়ে সৌগত রায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টা দেখছে।” পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, “জয়ন্তের বাড়ি যে জমিতে তৈরি হয়েছে, তার বৈধতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুকুরের একটা অংশ বোজানোর অভিযোগও দেখা হচ্ছে। বেআইনি প্রমাণিত হলে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।” জনবসতি এলাকায় খাটালের বিষয়টিও ‘খতিয়ে দেখা’র কথা বলছেন পুরপ্রধান।
Discussion about this post