জেলে বসে পড়াশোনা করে পিএইচডি-র প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। তারপরেও তাঁর পিএইচডি করার ক্ষেত্রে ‘অনাবশ্যক জটিলতা’ তৈরি করে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে জানিয়ে ময়দানে নামল তৃণমূল। দলের নেতা কুণাল ঘোষ তেমনই অভিযোগ করেছেন। ওই বিষয়ে কথা হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরিরও। প্রয়োজনে অর্ণবকে হুগলি জেল থেকে বর্ধমান জেলে নিয়ে আসা হতে পারে বলেও খবর। অর্ণব নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। ওকে পিএইচডি করতে দিতে হবে। এই দাবিতে সোশাল মিডিয়ায় সরব হলেন কুণাল।
তাঁর অভিযোগ, ওই মাও নেতার ভর্তিতে অহেতুক জটিলতা তৈরি করছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কারণ হিসাবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে নিয়মের দোহাই দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, গবেষণা করতে হলে অন্ত্যত প্রথম ৬ মাসের কোর্স ওয়ার্ক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাজির থেকে করতে হয়। জেলবন্দি অর্ণব তা করবেন কীভাবে ? প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য গৌতম চন্দ্র মঙ্গলবার বলেছিলেন, “অর্ণবকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হবে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে কী করা হবে, এই সমস্ত বিষয়গুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হুগলি সংশোধনাগারের সুপারের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তাই আপাতত কাউন্সেলিং স্থগিত রাখা হয়েছে। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উত্তর আসার পরেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্ণবকে হুগলি সংশোধনাগার থেকে পুলিশি প্রহরায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্টারভিউের জন্য। এর আগে অর্ণব জেলে বসেই ইগনু থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জেলে বসেই সেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। চুঁচুড়া সংশোধনাগার সূত্রে খবর, অর্ণবের পিএইচডি করার ইচ্ছার কথা সংশোধনাগার কতৃপক্ষকে জানায়। সেই মত যোগাযোগ করা হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ জানায় আইন মেনে তিনি পিএইচডি করতেই পারবেন জেল বন্দী মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। প্রসঙ্গত, অর্ণবের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। সে ছোট থেকেই মেধাবী। ১৯৯৮ সাল নাগাদ খড়্গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষে পড়াকালীন হঠাৎই ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান অর্ণব। যোগ দেন মাওবাদী সংগঠনে।
পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের পাহাড়ে-জঙ্গলে ছিল তাঁর গোপন আস্থানা। সংগঠনে কমরেড বিক্রম নামে পরিচিত ছিল তার। এছাড়া মাস্টারদা, ভানু, সূর্য নামেও ডাকা হতো অর্ণবকে। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত মাওবাদী পলিটব্যুরো নেতা কিষেনজির অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন অর্ণব। লালগড় আন্দোলনের সময় অযোধ্যা-বাঘমুন্ডির পাহাড়-জঙ্গলে অর্ণবের নেতৃত্বে গেরিলা বাহিনী নাজেহাল করে দিয়েছিল যৌথবাহিনীকে। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা থেকে শুরু করে একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত অর্ণব। ২০১২ সালে আসানসোল থেকে ধরা পড়েন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। জেলবন্দি হওয়ার পর থেকেই অসম্পূর্ণ থাকা উচ্চশিক্ষায় মন দেন তিনি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সাজা ঘোষণার পর প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল তারপর গত ১৭ মার্চ থেকে হুগলি জেলা সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন অর্ণব।
উল্লেখ্য, আদালতে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অর্ণব। বিচারক সেটা তাঁর আদেশে নথিভুক্তও করে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেছিলেন। কিন্তু সেই সময় হুগলী জেল কতৃপক্ষ তার আবেদনকে বিশেষ সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ। উচ্চ শিক্ষার জন্য অর্ণব অনশন শুরু করবেন ঘোষণা করেছিলেন। এরপর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর অর্ণবের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়।
Discussion about this post